দেশে গমের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এদিকে নানা কারণে এর উৎপাদন কমছে। তাই দিন দিন বাড়ছে গম আমদানির পরিমাণ। এ অবস্থায় গম থেকে উৎপাদিত আটা রপ্তানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের মেসার্স তাহেরী ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ২২ মেট্রিক টন আটা রপ্তানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। এর প্রক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে একটি চিঠি পাঠায়।
মতামত দিয়ে ট্যারিফ কমিশন বলছে, 'রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১' এ রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা ও শর্তসাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় যেহেতু আটা, ময়দা ও সুজি অন্তর্ভুক্ত নেই, সেহেতু এগুলো রপ্তানিতে কোনো সমস্যা নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদানকারী সরকারি এ সংস্থাটি আরও বলছে, আটা, ময়দা ও সুজি মূলত গম থেকে উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে মোট গমের চাহিদা প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন।
৫০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ২০১৭ সালে দেশে গম উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। আর গম আমদানি হয়েছিল ৪৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন, অর্থাৎ মোট সরবরাহকৃত গমের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
২০১৮ সালে আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন, আর উৎপাদন হয় ১১ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন।২০১৮ সরবরাহকৃত মোট গমের পরিমাণ ৬০ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০১৯ সালে নভেম্বর পর্যন্ত গম আমদানি হয় ৪৪ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। পাশাপাশি উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার টন। অর্থাৎ, গত নভেম্বর পর্যন্ত সরবরাহকৃত মোট গমের পরিমাণ ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন।
ট্যারিফ কমিশন বলছে, গত তিন বছরের স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে সরবরাহের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে। তাই মেসার্স তাহেরী ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডকে আটা রপ্তানির অনুমতি দিলে তা স্থানীয় বাজারে কোনো সমস্যা হবে না।
বিষয়টি সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য সচিবের কাছে তাদের এ মতামত পাঠায়।
আটা রপ্তানির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রপ্তানির বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু চাহিদার তুলনায় বাজারে গম বেশি রয়েছে, তাই আটা রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পক্ষে সরকার। যদি কখনো গমের ঘাটতি দেখা যায় তখন রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে বিশ্বের খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও আমদানির চিত্র নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সবচেয়ে দ্রম্নত হারে গমের আমদানি বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। পাঁচ বছর আগেও গম আমদানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০ দেশের তালিকার বাইরে ছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে এই তালিকায় বাংলাদেশ পঞ্চম।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের প্রধান কাজ দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ। বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে যৌক্তিকতাসহ সরকারকে যথাযথ পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কমিশন দায়িত্ব পালন করে থাকে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের উৎপাদন খরচ, কাঁচামালের আমদানি ব্যয়, পণ্যের আমদানি ব্যয়, জনবল, উৎপাদন ক্ষমতা, মূল্য সংযোজন, উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে কমিশন সুপারিশ প্রণয়ন করে।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বাজারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে থাকে কমিশনের 'মনিটরিং সেল'।