শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলের বাজার ১৬শ কোটি টাকার

নতুনধারা
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

আজ থেকে ২শ বছর আগেও ফুল বেচাকেনা হতো। তাই তো ১৯১১ সালে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন, জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি'/দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার/ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী। তখনকার সেই ফুল বর্তমানে দেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখন ফুলের চাষ হচ্ছে। সারাদেশে প্রায় ১৬শ কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। দেশের ৬ হাজার হেক্টর জমিতে এখন ফুল চাষ হচ্ছে। রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গস্নাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মলিস্নকাসহ দেশের চাষিদের উৎপাদিত ১১ ধরনের ফুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।

সারাদেশের ফুল চাষিদের কেন্দ্রীয় পস্নাটফর্ম বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, সারাদেশে প্রায় ১৬শ কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশেই কম- বেশি ফুলের চাষ হয়। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের ফুল দিয়েই সারা বছরের চাহিদা মেটে। তবে বাইরে থেকেও কিছু ফুল আসে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য বলছে, এ বছর ভালোবাসা দিবসে শুধু গোলাপের চাহিদা ৫০ লাখের বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী জোগান কিছুটা কম হতে পারে। কারণ, এবার যশোর এলাকায় গোলাপের ফলন খারাপ হয়েছে। সংগঠনটির তথ্য মতে, গত বছর ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণকে কেন্দ্র করে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবারও ১৯০ থেকে ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।

প্রসঙ্গত, ফুল চাষিরা সাধারণত জাতীয় বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ফুল চাষ করেন। এই ফুলের বড় অংশই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে বিক্রি হয়।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ফুলের বাজার আরও বড় হবে। এই বাজার ইতোমধ্যে অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ফুলের চাহিদা বাড়ার কারণে কৃষকের আয় বাড়ছে। এটা এখন অর্থকরী ফসল। তিনি বলেন, মানুষের আয় যত বাড়বে এই সৌখিন বাজারও ততটা বড় হবে। এবার করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশি ফুল বেশি নেই উলেস্নখ করেন তিনি।

ফুলের দোকান: সারাদেশে বর্তমানে ৬ হাজারের বেশি ছোট-বড় ফুলের দোকান আছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই আছে সাড়ে ৬শ ফুলের দোকান। তবে ভালোবাসা দিবসের দিন পাড়া-মহলস্নায় ফুলের ক্ষণস্থায়ী দোকান খুলে অনেকেই এ ব্যবসায় জড়ান।

\হযেসব দিবসে ফুলের চাহিদা বাড়ে : বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ইংরেজি নববর্ষ তথা ১ জানুয়ারি, ফেব্রম্নয়ারি মাসে বসন্তবরণ উৎসব, ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রম্নয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ তথা ১৪ এপ্রিল এবং ১৬ ডিসেম্বর তথা বিজয় দিবস। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের পূজা, বিয়ে ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানেও ফুলের দরকার হয়।

যে ফুলের কদর বেশি: দেশের ফুল চাষিরা ১১ জাতের ফুল উৎপাদন করেন। এছাড়া আরও চার জাতের ফুল বিদেশ থেকে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেশের উৎপাদিত গোলাপ ফুলের। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বাজারে বিক্রি হওয়া মোট ফুলের ৩৫ শতাংশই গোলাপ ফুল। গস্নাডিওলাস ২৫ শতাংশ, রজনী ২০ শতাংশ, জারবেরা ১০ শতাংশ এবং গাদা ও অন্যান্য ফুল ১০ শতাংশ বিক্রি হয়।

\হকোনো ফুলে মূল্য কত: রাজধানীতে যে গোলাপ ফুলের দাম ১০০ টাকা, যশোরের গদখালী হাটে পাইকারিতে সেই গোলাপ ১৫-১৬ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। গত বছরে প্রতিটা গোলাপ ১০ থেকে ১২ টাকায় চাষিরা বিক্রি করেছেন। গদখালী হাটে জারবেরা ১২-১৩ টাকা, গস্নাডিওলাস ৭-৮ টাকা, রজনীগন্ধা ৪-৫ টাকা, প্রতি আঁটি জিপসি ২০ টাকা, কামিনী পাতার আঁটি ১০০ টাকা ও গাঁদা প্রতি হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।

বাড়ছে ফুলের চাষ: ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৩টি জেলায় দেড় লক্ষাধিক লোক ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন। ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুলের ব্যবসা এখন লাভজনক ব্যবসা। গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় দেশি-বিদেশি ফুল চাষে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিবছর ফুলের চাষ বাড়ছে। ২০১৬-১৭ সালে দেশে ২ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ সালে সেখান থেকে এক হাজার হেক্টরের বেশি বেড়েছে। যশোরের গদখালী এলাকার ফুলচাষি শের আলী বলেন, অন্য ফসল চাষের চেয়ে এখন ফুল চাষে লাভ বেশি। যে কারণে অনেকেই ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানিয়েছেন, আগে বাণিজ্যিকভাবে ফুল রপ্তানি হলেও এখন আর হচ্ছে না। তবে ফুলের রপ্তানি বাজার গড়ে তোলার জন্য এখন বিভিন্ন দেশে মাঝে মধ্যে ফুলের স্যাম্পল পাঠান তারা।

ফুল রপ্তানি হয় কোথায়: দুই-তিন বছর আগে ফুল রপ্তানি হতো মধ্যপ্রচ্যের কয়েকটি দেশে। বর্তমানে ফুল রপ্তানি হচ্ছে না। আবদুর রহিম বলেন, ফুল রপ্তানি নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো ইপিবি যে তথ্য দেয়, সেটা মূলত, পান রপ্তানির তথ্য। পানের এইচএস কোড আর ফুলের এইচএস কোড একই। যে কারণে অনেকেই ফুল রপ্তানি হচ্ছে বলে ধরে নেয়। আবদুর রহিম জানান, ফুল রপ্তানির কোনো নীতিমালা নেই। এ জন্য ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল রপ্তানির একটি নীতিমালা চান। পাশাপাশি রপ্তানির জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তারা।

ফুল আমদানি : সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় পস্নাস্টিকের ফুল। এছাড়া যেসব ফুল দেশে উৎপাদন হয় না, সেসব ফুল মাঝে মধ্যে আমদানি হয়। যেমন, লং স্টিক রোজ, লিলিয়াম, জার্বেরা, স্টোমা, কার্নিশন। নতুন নতুন ফুল আমদানি হলে তাকে স্বাগত জানান দেশের ফুল চাষিরা। কারণ, আমদানি করা ফুলের চাহিদা বাড়লে, দেশের ফুল চাষিরা দেশেই সেই ফুল উৎপাদন করতে পারেন। যেমন, জারবেরা এখন দেশেই উৎপাদন করেন আমাদের ফুল চাষিরা। বাংলাদেশে ১৩ টি কালারের এই ফুল পাওয়া যায়।

ফুলের শত্রম্ন পস্নাস্টিকের ফুল : পস্নাস্টিকের ফুল এখন দেশের ফুল চাষিদের ও ফুল ব্যবসায়ীদের প্রধান শত্রম্ন। ফুল চাষিরা বলছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন পস্নাস্টিকের ফুল ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে পস্নাস্টিকের ফুল বাড়িতে সাজিয়েও রাখছেন। এতে ফুল চাষিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ প্রসঙ্গে আবদুর রহিম বলেন, আমরা পস্নাস্টিকের ফুল আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু এখনও পস্নাস্টিকের ফুল আসছেই।

বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88616 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1