বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সংকটে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অ্যাভিয়েশন শিল্প

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কাবু করে চলেছে গোটা পৃথিবীকে। থমকে আছে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ। গৃহবন্দি কোটি কোটি মানুষ। ভাইরাস প্রতিরোধে ঘর থেকে মানুষ কম বের হওয়ায় কিংবা নিষেধাজ্ঞা থাকায় কার্যত অচল পরিবহণ ব্যবস্থা। অন্য পরিবহণ ব্যবস্থার পাশাপাশি চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে অ্যাভিয়েশন শিল্পেও।

বিশ্বজুড়ে আকাশপথে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত পেস্নন কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় অন্য বাহনের তুলনায় অনেক বেশি। করোনা থেকে নিজের দেশকে সুরক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক পেস্নন চলাচল বন্ধ রেখেছে বহু দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম এ চিত্র দেখল বিশ্ববাসী।

শুধু ফ্লাইট বাতিল নয়, বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক বিমানবন্দরও। বাংলাদেশেও লেগেছে এর আঁচ। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া বাকি সব অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটেও ফ্লাইট চলাচল পুরোপুরি বন্ধ সব এয়ারলাইন্সের।

চীন, হংকং, ব্যাংকক, লন্ডন ও ম্যানচেস্টার ছাড়া বাকি সব দেশের সঙ্গেই পেস্নন চলাচল বন্ধ রেখেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। একইভাবে কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বহু দেশ বাংলাদেশের পেন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্সসহ বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলো বহু দেশে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বড় ধাক্কা খেয়েছে নরওয়েজিয়ান এয়ার।

পাশাপাশি বাংলাদেশি উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চারটি রুট ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স একটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালু রেখেছে। এছাড়া নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ সব রুটেই বন্ধ রেখেছে ফ্লাইট পরিচালনা। রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তিন মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দিনে ২৮টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১২০টির বেশি ফ্লাইট ওঠানামা করত। দিনরাত বিমানবন্দরে লেগেই থাকত মানুষের আনাগোনা। ব্যস্ত সময় পার করতেন বিমানবন্দরের কর্মীরাও। কিন্তু সেই বিমানবন্দরে এখন সুনসান নীরবতা। আকাশে নেই তেমন পেস্নন ওড়ার দৃশ্য। থমকে গেছে সব কার্যক্রম।

বিমানবন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেস্ননযাত্রী ছিলেন ২৭ লাখ ৬২ হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ২২ লাখ ৫৫ হাজার, আর অভ্যন্তরীণ রুটে ৫ লাখ ৭ হাজার। অপরদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যাত্রী এসেছে ২ লাখ ৪৯ হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ১ লাখ ৯৫ হাজার, অভ্যন্তরীণ ৫৪ হাজার। ফেব্রম্নয়ারিতে মোট যাত্রী সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ১ লাখ ৭৫ হাজার আর অভ্যন্তরীণ ৪৩ হাজার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর মার্চে এই সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যাত্রীদের পাশাপাশি আয় কমে গেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের। করোনাভাইরাসের আগে প্রতিমাসে দেশের অ্যাভিয়েশন খাত থেকে রাজস্ব আসত ১২০ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ। কিন্তু জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারিতে এই অঙ্ক ৮০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। আর মার্চে রাজস্ব আয় গড়ে ১০ শতাংশের বেশি হবে না।

অথচ বেবিচকের হিসাব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেবিচকের আয় ছিল ১০৯৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই আয় বেড়ে হয়েছিল ১৩১৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই আয় বেড়ে হয় ১৩৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই আয় আরও বেড়ে ১৪৩৮ কোটি টাকা হয়। কিন্তু দুই মাস ধরে গড়ে আয় হয়েছে মাসে ৬০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। আর মার্চের প্রথম দিকে অল্প আয় হলেও এখন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজস্ব নেই।

করোনা আতঙ্কে যাত্রীর সংকট আর বিভিন্ন দেশে পেস্নন যোগাযোগ বন্ধের কারণে এভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে উড়োজাহাজ পরিবহণ সংস্থা ও রেগুলেটরি কমিশন। বড় বড় বিমানবন্দর দিন দিন ফাঁকা হয়ে পড়ছে। অনেক এয়ারলাইন্স তাদের কর্মীদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটিতে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে দেশে দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব পর্যটনে নেমেছে ধস।

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থা (আইসিএও) জানিয়েছে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত লোকসানের মাশুল গুনতে হতে পারে।

উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের পেস্নন চলাচলের ট্র্যাককারী এনওয়াইএসই আরকা এয়ারলাইনস ইনডেক্স থেকে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে রাজস্ব আয় ৪০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। গত এক দশকে প্রথম এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ল অ্যাভিয়েশন শিল্প।

উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) আশঙ্কা করছে, এভাবে অব্যাহত থাকলে বিশ্বের বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলোকে ১১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

বর্তমান পরিস্থিতিকে দেশের অ্যাভিয়েশন শিল্পের জন্য 'মহাবিপর্যয়' আখ্যায়িত করে অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, দেশের অ্যাভিয়েশন শিল্পে করোনা ভাইরাস শুধু বিপর্যয় নয়, 'মহাবিপর্যয়' ডেকে এনেছে। এই অবস্থায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এখন বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুধু উড়োজাহাজের কিস্তি পরিশোধ নয়, সিভিল অ্যাভিয়েশনের চার্জ, কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নানা ব্যয় টানতে গিয়ে আমরা ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিমান ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94494 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1