বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রয়লার মুরগি বিক্রির পাইকার পাচ্ছে না পোলট্রি খামারিরা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, করোনাসহ যে কোনো ভাইরাস প্রতিরোধে প্রথম দরকার হলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। এজন্য ডিম দুধ ও মাংস খেতে হবে। ডিম দুধ ও মাংস খেয়ে করোনা হয়েছে-এমন কোনো প্রমাণ নেই।
যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

ব্রয়লার মুরগি নিয়ে বিপদে পড়েছেন পোল্টি ফার্মের মালিকরা। মুরগি বিক্রি করার সময় হয়েছে কিন্তু পাইকার বা ক্রেতা পাচ্ছেন না তারা। আগে ছোট খামারিরা খামার থেকে খুচরা কিছু মুরগি বিক্রি করতেন। এখন খুচরা ক্রেতাও নেই। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও গুজবের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলছেন খামারিরা।

শেরপুর জেলার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান। তিনি বললেন, 'আমরা পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা মহাবিপদের মধ্যে আছি। ব্রয়লার মুরগির বয়স ৩২-৩৫ দিন হয়ে গেছে। এখন বিক্রি করার উপযুক্ত সময় কিন্তু পাইকার আসছে না। অন্য ক্রেতারাও আসছে না। পাইকারদের ফোন করেছিলাম, তারা বলেছে, মুরগি বিক্রি করার জায়গা নেই। ঢাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। অন্যান্য শহরেও বেচাকেনা বন্ধ।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, '৩২ দিন পর মুরগিকে যতই খাওয়াই ওজন বাড়বে না। এখন মুরগি বিক্রিও করতে পারছি না আবার খাওয়াতেও পারছি না। কারণ আমার ফার্মে যে মুরগি আছে তাতে প্রতিদিন ৬ হাজার ৬০০ টাকার খাবার লাগে। ইতোমধ্যে সাতদিন চলে গেছে। এই সাত দিনে খাওয়া বাবদ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা লোকসান হয়েছে। এ লোকসাস কতদিন দিতে হবে তা জানি না।'

একই জেলার খামারি শহিদুল ইসলাম বললেন, 'কত টাকা কেজি পরের কথা, পাইকারই তো আসছে না। এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা। সেখানে ৫০ টাকা কেজিও বিক্রি করা যাচ্ছে না।' আট হাজার মুরগি আছে শহিদুলের ফার্মে। তিনি বলেন, 'এর মধ্যে পাঁচ হাজার মুরগির বয়স হয়ে গেছে। তাদের বিক্রি করার সময় ইতোমধ্যে পার হয়েছে। এরা আর বাড়বে না। অথচ প্রতিদিন ১১ হাজার টাকার খাবার দিতে হচ্ছে। এখন এদের বিক্রিও করতে পারছি না মেরেও ফেলতে পারছি না। আমরা মহাবিপদে আছি।'

যশোরের আফিল এগ্রো লিমিটেডের সহকারী পরিচালক মাহাবুব আলম লাবলু বলেন, 'করোনার প্রভাবে পোলট্রি মুরগির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা পোলট্রির মুরগি কেনা থেকে বিরত থাকছেন। এর কারণে খামারিরা উৎপাদিত মুরগির দাম পাচ্ছেন না। ছোট ছোট খামারিরা ইতোমধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।'

আফিল ফার্ম থেকে উৎপাদিত হয় দিনে ২৫ হাজার কেজি ব্রয়লার। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা।

'চীনে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই পোল্ট্রি মুরগির বাজার খুব খারাপ। বাংলাদেশে করোনা আসার পর কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন আমরা ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করছি'-বললেন সহকারী পরিচালক মাহবুব আলম।

করোনাভাইরাস হবে-এই গুজবে মানুষ মুরগি, ডিম, দুধ খাওয়া বাদ দিয়েছে। যে কারণে ডেইরি এবং পোল্ট্রি শিল্প ধস নেমেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেন, করোনাসহ যে কোনো ভাইরাস প্রতিরোধে প্রথম দরকার হলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। এজন্য ডিম, দুধ ও মাংস খেতে হবে। ডিম, দুধ ও মাংস খেয়ে করোনা হয়েছে-এমন কোনো প্রমাণ নেই। দুধ হলো আদর্শ একটি খাবার। এর বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালায় তারা মনুষ্যরূপী শয়তান।' তিনি বলেন, 'তারা দেশের এই পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাও দরকার। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রপত্রিকা, অনলাইন মিডিয়ায় প্রচারণা করা প্রয়োজন।'

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই পরিচালক আরও বলেন, আজ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে বৈঠকে বিজ্ঞাপন এবং টেলিভিশনে স্ক্রল যাওয়ার জন্য একটি স্স্নোগান ঠিক করা হয়েছে। তা হলো-'নিয়মিত ডিম, দুধ, মাংস খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94686 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1