বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রায়পুরে জলাবদ্ধতায় পানচাষিদের মাথায় হাত

মুকুল পাটওয়ারী, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
  ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৫৫

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় শত শত পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা পানচাষিরা। টানা বর্ষণে উপজেলার ৫০০ পানচাষির ৩৮৪ হেক্টর জমির বরজ প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সস্প্রারণ অধিদপ্তর।

এ দিকে, বরজে পানি ঢুকে পান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এমন বিপর্যয়ে পুরো জেলায় পান সরবরাহ ও বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় পান ব্যবসায়ীদের। চরবংশী ও চর আবাবিল ইউপির কয়েকটি গ্রামের পানচাষসমৃদ্ধ কয়েকটি এলাকা ঘুরে, পানচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পানের ক্ষয়ক্ষতির নানা তথ্য জানা গেছে।

পরপর দুইবার পানচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেননি বলে চাষিদের অভিযোগ।

রায়পুর কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউপির মোল্লারহাট, চরকাছিয়া, চরজালিয়া, মিয়ারহাট গ্রাম, উত্তর চরবংশী ইউপির খাসেরহাট, ভেড়ির মাথা ও আখন বাজার উত্তর চর আবাবিল ইউপির উদমারা, পাঙ্গাশিয়া, দক্ষিণ চর আবাবিল ইউপির গাইয়ারচর, চরপক্ষি ও ঝাউডুগি, ক্যাম্পেরহাট, কাঠেরপুল ও মিতালিবাজার, বামনী ইউপির বাংলাবাজার ও কবিরহাট এলাকা, শায়েস্তানগর ও দেবিপুর, চরমোহনা ইউপির বাবুরহাট ও উত্তর রায়পুর গ্রামের পানচাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পানের বরজে পানি প্রবেশ করেছে। যেসব বরজ থেকে পানি নামছে সেসব বরজে পানের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে। চর আবাবিল ইউপির ক্যাম্পেরহাট ও কাজির চর গ্রামের ইউসুফ মৌশাল ও চরপক্ষি গ্রামের রুস্তম আলী জানান, পান চাষ তাদের একমাত্র আয়ের মাধ্যম। গত বছর বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় বরজের ক্ষতি হয়েছিল। এবারও তার পুরাতন বরজ ও নতুন একটি বরজেই পানি ঢুকেছে। পানের পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ছে।

চরবংশী ইউপির আখন বাজার গ্রামের রুপক মজুমদার ও মাসুদ মিয়া জানান, গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা পানচাষের ওপর নির্ভর। সারা বছর পরিবারের সবাই মিলে বরজের পরিচর্যা করে পান বিক্রি করে সংসার চালান।

এবার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় এলাকার সব পানের বরজ প্লাবিত হয়েছে। একই গ্রামের মো. সুজন জানান, বরজের ক্ষতির কারণে ঋণের বোঝা বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারি সাহায্য ছাড়া তাদের মতো ক্ষুদ্র পানচাষিদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পানচাষিরা বছর বছর তাদের দুর্ভোগ লাঘবে একাধিক খাল খনন করে সহজে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছেন।

রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, মোট ৩৮৪ হেক্টর জমির বরজের মধ্যে বৃষ্টির পানি ও জলাবদ্ধতায় ৩৮৪ হেক্টর বেশি জমির বরজের ক্ষতি হয়েছে। পানগাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তার।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীন চৌধুরী জানান, পান এ এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল। জলাবদ্ধতার কারণে চাষিদের দুর্ভোগ যেন না বাড়ে এজন্য স্লইসগেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। যাতে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে। এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে