ধামইরহাটের ইসবপুর ইউনিয়নে পানিনিষ্কাশনের অভাবে শত শত বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২০, ১৯:২৩

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

 

নওগাঁর ধামইরহাটে শত শত বিঘা কৃষিজমির ফসল পানিনিষ্কাশনের অভাবে এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানিনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় তিন ফসলি জমিগুলো প্রায় কয়েকবছর ধরে তলিয়ে থাকার কারণে ওই এলাকার কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। শত কষ্টের পরও ওইসব জমিতে কৃষকরা ধানের চারা রোপণ করে থাকলেও পানিতে তলিয়ে গিয়ে তাদের চারাগুলো নষ্ট হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে নিচু জমিগুলোতে পানি জমিয়ে থাকায় ধানের রোপণকৃত চারাগুলো বিনষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। আর কিছুদিন পরেই কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠতে শুরু হবে। কিন্তু পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসল হারানোর কষ্টে কৃষকদের বুকে চাপা আর্তনাদ।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবারে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৯,৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও টানা বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২৩ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর মহিষগাড়ি বাঁধের পূর্বপাশে রাঙালঘাট, মহিষপুর, মানপুর এলাকায় প্রায় ৪ শত বিঘা জমির ফসল দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। নদীর পশ্চিম পাড়ের চর এলাকারও শত শত বিঘা জমির ফসল পানি নিষ্কাশনের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। উঁচু কিছু জমির ফসল ঘরে তুলতে পাওয়ার আশা থাকলেও নিচু জমিগুলোর ফসল সব নষ্ট হয়েছে। ওই ইউনিয়নে টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে ৭৪ হেক্টর জমির ধান ও ৩ হেক্টর জমির রবিশস্য চলতি মৌসুমে নষ্ট হয়েছে। কৃষকদের দাবি ওই নদীর বাঁধ নির্মাণের পর থেকে পানি নিষ্কাশনের অভাবে তাদের ফসল প্রতি বছর নষ্ট হয়। বাঁধে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে ওইসব জমির ফসল রক্ষা পাবে, এমনটা মনে করছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

 

ওই এলাকার কৃষকদের পানির নিচে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা জমির ফসলগুলো রক্ষার্থে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে রাঙ্গালঘাট এলাকার মহিষগাড়ি বাঁধে পানিনিষ্কাশনের জন্য ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ এবং পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর হরিপুর ব্রিজ থেকে জাবারপুর ঘাট পর্যন্ত নদী পুনঃখনন করলে ওইসব কৃষকের জমির ফসল সুষ্ঠুভাবে প্রতি বছর ঘরে তুলতে পারবেন।

 

এ বিষয়ে রাঙ্গালঘাট এলাকার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে কৃষক মো. জাইদুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পূর্বপাশে আমার পরিবারের প্রায় ৫ বিঘা ফসলি জমি আছে। তার মধ্যে আমার নিজস্ব ৪৯ শতাংশ জমিতে আমি প্রতি বছরে ধানসহ রবিশস্য লাগিয়ে থাকি। তা থেকে বছরে আমার ২০-২৫ হাজার খরচ বাদে আয় হয়। কিন্তু পানিনিষ্কাশনের অভাবে কয়েক বছর থেকে আমি ফসল ভালোভাবে ঘরে আনতে পারি না।

 

কৃষক দেলোয়ার হোসেন সরদার জানান, আমি ৮ বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করেছি কিন্তু মহিষগাড়ি বাঁধ নির্মাণের পর থেকে আমার জমির ফসল বর্ষা মৌসুম এলেই পানিতে তলিয়ে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ফসল পানির নিচে থাকায় সব জমির ফসল নষ্ট হয়। এবারও আমার সব জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

 

এ বিষয়ে ইসবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েশ বাদল জানান, গত মাসে উপজেলা পর্যায়ে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে আমরা ওই এলাকার পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার গনপতি রায় বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁ জেলা শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্য লিখিত ফর্মুলা অনুসরণ করে আসতে পারলে আমরা বিষয়টি দেখব। তারপরও আমার এ বিষয়ে জানা ছিল না আমি আমার লোকজন ওই এলাকায় পাঠিয়ে দিব বিষয়টি কী পর্যায়ে আছে তা দেখার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।