শ্রীপুরে আমনের সোনালী শীষ দুলছে বাতাসে

প্রকাশ | ২০ নভেম্বর ২০২০, ১৯:২০

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

 

চলছে আমন মৌসুম। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রায় জমিতে দুলছে এখন আমনের সোনালী শীষ। মন জুড়ানো এ ধানে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও এ বছর কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু হয়ে গেছে  ধানকাটা। ধানে ধানে ভরে উঠেছে মাঠ। সে সাথে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। তাই মাঠজুড়ে এখন সোনালি স্বপ্নের ছড়াছড়ি। নতুন ধানের উপস্থিতিতেই কৃষক পরিবারে লেগেছে আনন্দের ঢেউ। বাতাসে ভেসে আসছে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ।

 

প্রতি বছর আমনের ফলন ঘরে ওঠার পর নবান্ন উৎসব যেন বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য। এসময় কৃষকের নিকট আত্মীয়দের সমাগম ঘটবে বাড়িতে বাড়িতে। শত ব্যস্ততার মাঝেও নবান্নের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় কৃষকরা। মাঠে তাদের সোনালি স্বপ্ন বাতাসে দুলছে। আর সেই আনন্দে আমন ধান কাটা শুরু করেছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। কদিনের মধ্যে পুরোদমে আমন কাটার ধুম পড়ে যাবে। এবারও ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকের ঘরে ঘরে এখন নবান্ন উৎসবের আমেজ বিরাজমান। ইতোমধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের পিঠাপুলি খাওয়ানোর জোর প্রস্তুতি চলছে কৃষকের। 

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি মৌসুমে শ্রীপুরে এবছর ১৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা ছাড়িয়ে আমনের চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। সে অনুযায়ী উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩হাজার ৫শত মেট্রিটন। এবার বিরুপ আবহাওয়ার সম্মুখীন না হওয়ায় আশানুরূপ ফলনের চেয়েও ভাল ধান হওয়ায় লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলায় এবার আমনের আশানুরুপ ফলন হয়েছে। অনুক’ল আবহাওয়ার মাঝে ভাল ফলন  পেয়ে খুশিকৃষকেরা। শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী,প্রহলাদপুর, গোসিংগা,কাওরাইদ,মাওনা,গাজীপুর,বিন্দুবাড়ী,লোহাগাছসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা নিয়ে। শ্রমিকরা ধান কেটে আটি বেঁধে মাথায় করে কিংবা গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। সেখানে বাড়ির উঠানে অথবা মাঠের পাশে ধানের খলা করে চলছে ধান মাড়াই করার কাজ। যদিও শ্রমীকের দাম বেশী বলে অভিযোগ কৃষকের।

 

৮বিঘা জমিতে আপন উদ্যোগে আমন আবাদ করেছেন পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের কৃষক হাজী সাহাব উদ্দিন মোল্লা। তিনি জানান, সময় মতো বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আলহামদুলিল্লাহ জমিতে খুব ভালো ধান হয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পোকার আক্রমণ তেমন একটা হয়নি। তাই আশা করছি খরচ পুষিয়ে লাভবান হবো। তবে কামলার দাম বেশী। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ পড়ছে ৩ হাজার টাকা। গোসিংগা গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন আকন্দ জানান, আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় ফসলের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। পোকামাকড় তেমন আক্রমন করেনি। তবে, ধানের দাম নিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে শংঙ্কা কাজ করছে। 

 

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান যায়যায়দিনকে জানান, এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুক’লে থাকায় আমন  ফললের বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের  সার্বক্ষনিক সহযোগিতা ও সরকারি সহায়তায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আশানুরূপ ফলনের পাশাপাশি  বাজারে নতুন ধানের দামও ভাল। ফলে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।