ডুমুরিয়ায় সমন্বিত চাষে ভাগ্য ফিরেছে কৃষকের

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২০, ২০:৩০

সুব্রত কুমার ফৌজদার, ডুমুরিয়া (খুলনা)

 

 

 

 

 

     

খুলনার ডুমুরিয়ায় সমন্বিত চিংড়ি চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে কৃষকের। তারা একই জমিতে চিংড়ি (গলদা), সাদা মাছ, ধান ও শাক-শবজি উৎপাদন করছে। এতে কৃষকরা অর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে।    

 

সরেজমিনে ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, দেশে ক্রমন্বয় আবাদযোগ্য জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার বাসস্থানের কারণে যেমন কমছে কৃষি জমি, তেমনি বাড়ছে মানুষের খাদ্যের চাহিদা। আর তাই অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে মিঠা পানিতে “সমন্বিত চিংড়ি চাষ কার্যক্রম” শুরু হয়। চীন সর্ব প্রথম সমন্বিত চাষ শুরু করে।

 

 ১৯৫০ সালে বিশ্বব্যাপী এ চাষ ব্যবস্থা আরো উন্নত হয়, বিশেষ করে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে। বাংলাদেশের কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বাবলম্বি হতে চলেছে। সমন্বিত চাষ এখন দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল তথা খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উপজেলায় লবন ও মিঠা পানির মিলে ১৪’শ হেক্টর জমিতে মৎস্য ঘের রয়েছে। ডুমুরিয়া কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের অন্যতম। কৃষকরা মৎস্য ঘেরের আইলে সীম, করোলা, শশা, লাউ, টমেটো, চিচিঙ্গা, ধুন্ধল, বরবটি, বেগুন, পেঁপে, ওলকপি, ফুলকপি, আলু, চুইঝাল, কাচকলা চাষাবাদ করছে। গেল বছরে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে ঘেরের একই জমিতে প্রায় ৩’শ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে।  

 

উপজেলার বান্দা, বড়ডাঙ্গা, হাজিবুনিয়া, সোনাডাঙ্গা, রাজনগর, বান্দা, তালতলা, চাতরাবিল, ধানিবুনিয়া, ঘোনা, কাপালিডাঙ্গা, গুটুদিয়া, বগারখোর, কালিদাশপুর, খড়িয়া, মির্জাপুর, ভেলকামারি, বিলপাবলা, লাইনবিলপাবলা, রামকৃষ্ণপুর, মাধবকাটি, রংপুর, রঘুনাথপুরসহ অধিকাংশ বিলগুলোতে মিশ্র চাষাবাদ হচ্ছে।   

 

হাজিবুনিয়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ ঢালী সমন্বিত চাষাবাদ করে স্বাবলম্বি হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে সে মৎস্য চাষ শুরু করে। সোনাডাঙ্গা, রাজনগর ও হাজিবুনিয়া বিলে তার ৫৫টি গলদা চিংড়ীর ঘের আছে। প্রতি বিঘা জমিতে সে সাড়ে ৩ হাজার গলদা রেনু, ২৫টি কাতলা, ২৫টি সিলভারকার্প, ১টি গ্লাসকার্প ও ১টি ব্লপকার্প মাছ দেয়।

 

ঘের ব্যবসায়ী বিশ^জিত ঢালী যায়যায়দিনকে বলেন, প্রত্যেকটা ঘেরের আইলে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছি। এ বছর সবজির দাম খুব ভালো। তিনি বলেন, এবার ২০০ মন গলদা চিংড়ী উৎপাদন হয়েছে এবং প্রায় ২৮ লাখ টাকার সবজি বাজারজাত করেছি। তবে সবজিতে আর্থিকভাবে লাভ বেশি হলেও করোনার কারণে মাছের ভালো দাম পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ওই এলাকার ঘোনার বিকাশ গাইন, হাজিবুনিয়ার অংশু ঢালী, বিশ্বজিৎ মন্ডল, বিকাশ ঢালী, দিলিপ মন্ডল, গুটুদিয়ার সুকুমার মন্ডল, চৈতন্য কবিরাজ সমন্বিত চিংড়ি চাষ করে স্বাবলম্বি হয়েছেন। এছাড়া অনেকে ঘেরের উপর ঘর তৈরি করে সেখানে হাঁস-মুরগি পালন করছে।

 

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বককর সিদ্দিক জানান, মৎস্য উৎপাদনে ডুমুরিয়া একটি মডেল। এখানে ২৩ হাজার ৭৬জন মৎস্য চাষী আছে। এরমধ্যে গলদা চাষী আছে ১৬ হাজার ৭২০জন। এখানকার মাছ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। আমরা চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ, প্রশিক্ষন দিয়ে আসছি। করোনা ভাইরাসের কারণে পোনা ঘাটতি ও খাদ্য মুল্য বৃদ্ধি হওয়াতে চিংড়ী উৎপাদন অনেকটা কমে গেছে। তবে সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বি হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ডুমুরিয়ায় ১৪’শ হেক্টর মৎস্য ঘের আছে। ঘেরের আইলে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন হয়। গেল বছর ৩০০ কোটি টাকার সবজি উৎপাদন হয়েছিলো।