বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সোনাইমুড়ীতে সার বিক্রি মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষক হতাশ

খোরশেদ আলম, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
  ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:০১

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে সারের বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিসিআইসি ও খুচরা ডিলাররা তাদের ইচ্ছামতো মূল্যে বিক্রি করছে সার। এতে বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষির জন্য বিদ্যুৎ, সার সরবরাহ করে থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। সাধারণ কৃষকরা সার ক্রয় নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলছে নিয়োজিত ডিলারদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় ১২ বিসিআইসি ডিলার ও ওয়ার্ডে ১ জন করে ৯০ জন খুচরা ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। কৃষকদের সুবিধার্থে সরকার ডিলার নিয়োগ দেয়। ডিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্বাভাবিকের তুলনায় ১০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি করছে টিএসপি, এমওপি এবং ইউরিয়া সার। ফসল উৎপাদনে অত্যাবশ্যকীয় এই তিন ধরনের সার দাম নিয়ন্ত্রণে উপজেলা কৃষি বিভাগের কোনো মনিটরিং নেই। কৃষি খাতের উন্নয়নের ও কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ ও কষ্ট লাঘব করতে কৃষিসেবা কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ডিলার নিয়োগ দিয়েছে। উপজেলার সাধারণ কৃষক শীতের সবজি ও ধানের বীজসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ শুরু করেছে।

মৌসুমের শুরুতেই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করে কৃষকদের কষ্টের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসৎ সার ব্যবসায়ী। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সারের ডিলাররা সার পাওয়া যাচ্ছে না ও বেশি দামে সার কিনতে হয় বলে কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে এইসব সার ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইউরিয়া ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৯৫০ টাকা, টিএসপি ১১০০ টাকার পরিবর্তে ১৩০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৯০০ টাকা ও ডেফসার ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১০০০ টাকায় বিক্রি করছে।

উপজেলার দেওটি গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান মিয়া জানান, খুচরা ডিলারের দোকান থেকে টিএসপি সার ১৩০০ টাকায় ১ বস্তা সার ক্রয় করেছেন। তিনি সারের সঠিক দাম জানেন না। দোকানদারা যে দাম বলে আমাদের এই দামেই ক্রয় করতে হয়।

সোনাইমুড়ী গ্রামের কৃষক আবদুল রহিম জানান, পৌর এলাকার বিসিআইসি সার ডিলার আনোয়ার হোসেন সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩/৪ শত টাকায় প্রতি বস্তা সার বিক্রি করছে। কৃষকরা চড়া মূল্যে সার বিক্রি করায় তার কাছ থেকে ক্রয় না করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অন্যত্র সার সংগ্রহ করছে।

সোনাইমুড়ী উপজেলার তিনতেড়ি নামক স্থানের খুচরা ডিলার শাহ আলম জানান, তাদের মূল বিসিআইসি ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চাহিদা অনুযায়ী সার দেন না। সরকারি মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তায় ২/৩ শত টাকা বেশি দাম দিলে সার দেন। আবার বিসিআইসি সার ডিলাররা অতিরিক্ত মূল্য পেয়ে খুচরা ডিলারদের কাছে সার বিক্রি না করে বিভিন্ন দোকানির কাছে বিক্রি করছেন। এতে খুচরা সার ডিলাররা বিপাকে পড়ে।

কালিকাপুর গ্রামের খুচরা ডিলার হোসেন অভিযোগ করে জানান, তার ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার থেকে ডিলার না হয়েও চা দোকানি ফখরুল ইসলাম সার চড়া মূল্যে কিনে এনে কৃষকদের কাছে আরও চড়া মূল্যে বিক্রি করছে। এইসব অসাধু কালোবাজারিদের সঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছে।

সোনাইমুড়ীর সোনাপুর ইউনিয়ন কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন জানান, তাদের নির্দেশ অমান্য করে কতিপয় ডিলার চড়া মূল্যে সার বিক্রি করছে।

সোনাইমুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল হক রুমেল জানান, ডিলার না হয়ে সার বিক্রি করছে এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছেন। সার পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে