শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ চাষে ভাগ্য বদল হানিফের

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৫৬

চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা এলাকায় অবস্থিত হানিফের গাড়ি রাখার গ্যারেজ। গ্যারেজের একটি অংশ অব্যবহৃত থাকায় দুই বছর আগে সেখানে বায়ো ফ্লক্স পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। আর এই মাছ চাষেই ভাগ্য বদল হয়েছে গ্যারেজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ গাজীর। ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে বছরে ১ লাখ টাকা করে আয় করছেন তিনি।

শহরের স্বর্ণখোলা এলাকার বাসিন্দা আ. রাজ্জাক গাজীর ছেলে হানিফ গাজী। স্ত্রী, দুই ছেলে আর ১ মেয়ে নিয়ে হানিফের সংসার।

হানিফ বলেন, গত ২ বছর আগে আমি ৩৬ শতাংশ জায়গাটি ভাড়া নেই। পরে এখানে একটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ দেই। এতে করে যেই টাকা আয় হতো তা দিয়ে আমার খুব একটা লাভ হতো না। তখন আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, আমার গ্যারেজের পুরোটা ব্যবহার হচ্ছে না। তখন আমি মাছ চাষের জন্য গ্যারেজের অব্যবহৃত অংশটা বেছে নিলাম।

তিনি বলেন, গ্যারেজের অব্যবহৃত থেকে যাওয়া ১২ শতাংশ জমিতে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করেন বায়ো ফ্লক্সের ৬টি বেড। এজন্য মাটির উপর প্লাস্টিকের রেক্সিন বিছিয়ে বক্স আকারে ট্যাংকি তৈরি করা হয়। সেখানে পাইপের সাহায্যে ডিপটিউবওয়েলের পানি সরবরাহের পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। মোবাইলে ইউটিউবের মাধ্যমে সর্ব প্রথম তিনি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষাবাদের সাথে পরিচিত হয় বলে জানান হানিফ।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমি গাড়ির গ্যারেজের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষাবাদ করছি। বিজ্ঞান সম্মত হওয়ায় অল্প জায়গাতেই অধিক মাছ চাষ করতে পারছি। এতে করে অল্প খরচে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে।

হানিফ গাজী বলেন, প্রথম এককালীন ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাছ চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমি বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা করে আয় করছি। কই, শিং, পাঙ্গাশ, মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে কর্মপরিধি আরও বাড়ানোর স্বপ্ন রয়েছে জানিয়ে হানিফ বলেন, বর্তমানে আমি অস্থায়ীভাবে মাছ চাষ করলেও তা স্থায়ীভাবে আরো বড় পরিসরে করার ইচ্ছে রয়েছে। বায়ো ফ্লক্সে চাষকৃত এসব মাছ খেতেও অনেক সুস্বাধু বলে জানান তিনি।

মাছ চাষে হানিফ নিজের ভাগ্য ফেরানোর পাশাপাশি বেকারদের জন্যও কর্মসংস্থানেরর সৃষ্টি করেছেন। অনেক বেকার যুবক তার মাছের খামারে চুক্তিভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাছাড়া হানিফের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক বেকার যুবক তার মাছের খামার দেখতে আসেন।

শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার যুবক মো. সুমন, স্বপন গাজী, মো. আকাশ বলেন, আমরা হানিফ ভাইয়ের মাছের খামারে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে থাকি। এতে করে আমাদের অবসর সময়টা কাজে লাগিয়ে কিছু টাকা উপর্যন করতে পারি। একই সাথে তার সাথে থেকে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের পদ্ধতিটা শিখছি। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে আমরাও তার মত করে মাছ চাষ শুরু করবো।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, এটা একটা আনন্দের সংবাদ আমাদের জন্য। একটি গ্যারেজের অব্যবহৃত অংশতে মাছ চাষের মাধ্যমে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মাছের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছেন তিনি। মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে এভাবে এগিয়ে আসলে দেশের চিত্র পাল্টে যেতে বাধ্য। পরিত্যক্ত জমিতে এই ধরনের মৎস্য খামার গড়ে তোলায় জেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে