শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে ৪ হাজার মৌয়াল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ২০:০৮

সুন্দরবনের মধু এদেশের ঐতিহ্য। খাঁটি মধুর ঘ্রাণ ও স্বাদ অতুলনীয়। প্রায় বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেশাদার মৌচাষিরা কোনো না কোনো ফুলের মধু সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে সুন্দরবনের মধু উৎকৃষ্টমানের। মধুপ্রিয়দের কাছে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কদর অন্য রকম। জাতীয় অর্থনীতিতে মধুর অবদান অপরিসীম।

সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া গরান, খলিষা, কেওড়া ও বাইন গাছের ফুল হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। খলিষা ফুলের মধু সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। দেখতে সাদা, খেতে সুস্বাদু।

সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, প্রতি বছরের এপ্রিল ও মে দুই মাস মৌয়ালরা সুন্দরবন হতে মধু সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালে সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল। পক্ষান্তরে মধু আহরিত হয়েছে ২ হাজার ৬ কুইন্টাল। অপরদিকে মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৫ কুইন্টাল। মোম আহরণ হয়েছে ৬০২ কুইন্টাল। রাজস্ব উপার্জিত হয় ১৫ লাখ ৪ হাজার ৮৭৫ টাকা। ৫ লক্ষাধিক টাকার অধিক রাজস্ব আয় হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ৪ হাজার ১৩ জন পেশাদার মৌয়াল সুন্দরবন হতে মধু আহরণ করে। বছরজুড়ে তাদের স্বপ্ন দোল খায় সুন্দরবনের মৌচাকে।

সুন্দরবনে মৌচাক হতে পর্যাপ্ত মধু আহরণের জন্য মৌয়ালদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কারণ উপযুক্ত সময় ছাড়া মৌচাক হতে পর্যাপ্ত মধু পাওয়া যায় না। তাছাড়া মধু আহরণের সময় যাতে মৌমাছি আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর রাখতে হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবে গাছে ফুল ভালো না হলে মধু উৎপাদন ব্যাহত হয়। কারণ ফুলের সঙ্গে মধু উৎপাদনের নিবিড় সম্পর্ক। পরিচর্যা ও সংরক্ষণের ফলে ইদানীং সুন্দরবনে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মধু উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। তিনি সরকারিভাবে মধু প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানির কথা বলেন। এতে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।

শ্যামনগরে মধু নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির পরিচালক মাসুদুর রহমান মুকুল বলেন, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত সুন্দরবনের মধু উৎকৃষ্ট মানের। কিন্তু উৎপাদিত মধু সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা গেলে বিদেশে অধিক মূল্যে বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তিনি নিউজিল্যান্ডে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ভানুকা মধুর উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মধু। প্রতি কেজি মধু ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

সুন্দরবন অঞ্চলে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠলে অধিক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে