শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে উঠছে নতুন আলু, দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষক

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি
  ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:২৪

বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহী বিভাগ। ফসল উৎপাদনেও রয়েছে যথেষ্ট খ্যাতি। ধান, পাট, গম, টমেটোসহ নানান ফসল উৎপাদন করে যথেষ্ট সুনাম কুড়াচ্ছে রাজশাহী অঞ্চল।

চলতি মৌসুমে এই বরেন্দ্র অঞ্চলে উঠতে শুরু করেছে অগ্রিম আলু। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর গাছ ও ফলন ভালো হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। আর রাজশাহী কৃষি বিভাগ বলছে এই অঞ্চলে এবার আলু আবাদে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। তবে আলুর ফলন ভালো হলেও সময়মতো দাম ভালো পাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে কৃষক।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আলুর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এটি ১ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর।

রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে তানোর উপজেলায় ১২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৮৫০ হেক্টর, পবায় ৪২৫০ হেক্টর, মোহনপুরে ৪৭০৫ হেক্টর, বাঘমারা ৯৪৮০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ১৮৭০ হেক্টর, পুঠিয়ায় ১০৫০ হেক্টর, চারঘাটে ৮৫ হেক্টর, বাঘায় ৪১০ হেক্টর। এছাড়াও রাজশাহী মহানগরীর মতিহারে ২৯ হেক্টর, বোয়ালিয়ায় ৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে।

গোদাগাড়ীর আলুচাষি মো: হিমেল জানান, এবার ৭০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। অন্যের জমি লিজ গ্রহণ করে সব খরচ মিলে আলু লাগাতে বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। অগ্রিম আলু প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৭০-৮০ মণ। নতুন আলু কেজি প্রতি বিক্রি হয় পাইকারি সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। এই হিসেবে বিঘা প্রতি লাভ হয় ১০ হাজার টাকার মতো। তবে আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরে রাখলে ৬০ কেজির বস্তা ভাড়া দিতে হয় ২৩৫ টাকা । এছাড়াও অনেক সময় আলুর দাম না থাকায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় চাষিদের।

তানোরের কৃষক মো. আলম জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি বছর আলু আবাদ করি। এবার দুই বিঘা নিজের জমিতে আলু আবাদ করেছি। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৫-১৮ হাজার টাকা। ডাইমন্ড ও কার্ডিনাল জাতের অগ্রিম আলু উঠতে শুরু করেছে। এই আলু নভেম্বরের মাঝামাঝিতে লাগালে ৬০ দিনের মধ্যে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে এই আলু পাইকারি দাম সর্বোচ্চ ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি। অগ্রিম জাতের এই আলু বিঘা প্রতি ফলন হয় ৬০ হতে ৭০ মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে। তবে সংরক্ষণের অভাবে আলু একসময় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। দেশে পর্যাপ্ত আলুর আবাদ হয়। তবে যখন দাম বেড়ে যায় তখন আমাদের আলু থাকে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি হতে যখন আলু ওঠে তখন এক শ্রেণির ফড়িয়া দালাল ব্যবসায়ী কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা কম দামে আলু কেনে কৃষকদের কাছ হতে। ওরা পাইকারি দরে পুনরায় বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভ করে। আর এসব কমদামে আলু কেনার জন্য একটি সিন্ডিকেট চক্র আছে তারাই মূলত এই বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরে রাখতে গেলে সেখানেও রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। বস্তাপিছু আলু রাখতে অনেক বেশি টাকা নেয়। ফলে সব আলু কৃষক কোল্ডস্টোরে রাখতে পারে না। তাই একসময় সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে আলু রাখতে হয়ে কোল্ডস্টোরে।

আলুচাষি হাসান জানান, অগ্রিম জাতের যে আলু ৬০ দিনে ওঠানো হয় সেটিতে কিছুটা লাভবান হওয়া যায়। তবে এবার বীজসহ সবকিছুর দাম বেশি হওয়াতে আলুতে লোকসানের শঙ্কা আছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক জানান, রাজশাহী জেলায় আলু আবাদে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া ও রোগবালাই না থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে মনে করি। বর্তমানে যে দাম আছে তা থাকলে আলুচাষিরা লাভবান হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে