ভেদরগঞ্জের চরাঞ্চলে আসা বাণিজ্যিক মৌচাষীরা কোটি টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:২৫

ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের কয়েক বছর আগে শুরু করা মৌচাষ থেকে এবছর কোটি লক্ষ টাকার মধু অহরণের জন্য উপজেলার বিভিন্ন ফসলি জমির পাশে ৩ সহস্রাধিক মৌবক্স বসিয়েছে চাষীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে মধু চাষ করে প্রায় কোটি লাখ টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছে ভেদরগঞ্জের চরাঞ্চলে আসা বাণিজ্যিক মৌচাষীরা।

 

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া, আর্শিনগর, ডিএম খালি, সখিপুর ও উত্তর তারাবুনিয়ার ফসলি জমির পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করে মৌ মাছির মাধ্যমে সরিষা, কালোজিরা ও ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসলের ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খরচ বাদে মৌ চাষীর প্রায় ২২ লক্ষাধিক টাকা লাভ করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, এ মৌচাষের মাধ্যমে তাদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাটি মধু পান তারা।

 

সাতক্ষিরা থেকে আসা মৌ চাষী মীর মোহাম্মদ জানান, আমার চাচার নেতৃত্বে আমরা ২টি দলে ডিএমখালিতে আছি। আমরা এ ইউনিয়নের আকন কান্দি ও মুন্সি কান্দিতে মাঠের পাশে ৮০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহের চেষ্টা করছি।

 

পরিচর্যা ও মৌমাছি দেখাশুানার পাশেই টোং তৈরি করে সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও রাত্রী যাপন করছি। শীত মৌসুমের শুরু থেকে ৪ মাস আমরা এ এলাকায় মধু সংগ্রহ করি। প্রতিটি মৌ বাক্সের মধ্যে একটি করে রানী মৌমাছির সাথে রয়েছে হাজার হাজার মৌমাছি। মৌমাছি গুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। ভরা মৌসুমে মাসে একটি মৌ বাক্স থেকে ৩ থেকে ৪ বারে ২ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এ মধু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মধু ৪ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি করি আমরা।

 

ভেদরগঞ্জের ডিএম খালির মাদবর ও চর মিহিষখালির কান্দিতে রওশন আলী তরফদারের নেতৃত্বে ২৩০টি মৌবাক্স বসানো হয়েছে তিনি বলেন, আমরা জাজিরা ও ভেদরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এভাবে বাক্স বসিয়ে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করি। মৌমাছি সরিষা, ধনে, কালোজিরা, লিচু, বড়ই ফুলসহ বিভিন্ন ফুল থেকে মধু আহরণ করে। প্রথম দফায় একবার মধু ভেঙ্গেছি এতে যে পরিমান মধু পেয়েছি আশা করছি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সবাই মিলে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা মধু আহরণ করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।

 

আর্শিনগর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ কায়সার আহমেদ রানা বলেন, মৌচাষের মাধ্যমে চাষিরা যেমনি বাড়তি আয় করেন, তেমনি মৌ মাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

ফলে দুইদিকে তারা লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের এসএমই কৃষক ফারুক মাঝির মাধ্যমে এ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ১০টি বাক্স দিয়ে আমরা মৌমাছি চাষ ও সরিষার পরাগায়ণের সাথে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলাম। বর্তমানে সে মৌচাষ সম্প্রসারণ করে ৩০টি বক্সে উন্নত করেছে। তার দেখেদেখি সাতক্ষিরা, জামালপুর ও ফরিদপুর থেকে ২২ জন খামারী এসে প্রায় ৩১ শতাধিক মৌবক্স বসিয়েছে।

 

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের মুখপাত্র মামুনুর রশিদ হাসিব জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় এবছর ২ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে সরিষার, ৯৬৩ হেক্টর জমিতে ধনিয়া ও ১ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে কালোজিরার চাষ হয়েছে। আমাদের স্যার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলামের আন্তরিক সহযোগিতায় এবছর উপজেলার নারায়নপুর, চরকুমারিয়া, আর্শিনগর, চরসেন্সাস, সখিপুর, ডিএম খালি, উত্তর তারাবুনিয়ায় ২২ জন খামারি ৩ হাজার ১০০টি মৌবক্স বসিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে চলতি বছরে আমাদের উপজেলায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার মধু আহরণ সম্ভব হবে।

 

 

স্থানীয় চরকুমারিয়া ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক মোল্যা বলেন, আমি সুযোগ পেলেই বাক্সে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা দেখতে আসি। আমার এলাকার চাষীরা বলেন, মৌবক্সে মৌ চাষের কারণে তাদের ফসলের উৎপাদন ভালো হচ্ছে এবং এলাকাবাসী খাঁটি মধু পাচ্ছে।

 

যাযাদি/এস