মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিয়ার বড়দেইল গ্রামে আলুর মেলা

তাজুল ইসলাম তছলিম, হাতিয়া
  ০২ মার্চ ২০২১, ১৯:০৪

বেড়ীর বাহিরে অগোচানো গ্রামীন সড়ক, সড়কে সারি সারি মালবাহী টমটম গাড়ী , গাড়ীতে বস্তা বর্তি আলু বোঝাই দিচ্ছে ব্যাপারিরা, মাঠে কৃষক কৃষানীর স্ব পরিবারে আলু তোলার দৃশ্য, মাঠ জোড়ে চোখের দৃষ্টি শক্তির মধ্যে অসংখ্য কৃষক কৃষানী পরিবারকে দেখা যায় একই কাজ করতে, সবাই জমিতে আলতো নিড়ানি দিয়ে উপরে উঠে আসা আলু গুলো ক্ষেতের এক পাশে জড়ো করছে, কেউ তা ব্যাপারিদের ক্ষেতেই মেপে দিচ্ছে, এই কাজে কৃষক কৃষানীদের সহযোগীতা করছে তাদের ছোট শিশুরাও, সবার মূখে আনন্দের হাসিঁ আলুর ফলন ভালো হওয়ায়। নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড়দেইল গ্রামের বেড়ীর বাহিরে আলু চাষীদের চিত্র এটি ।

বড়দেইল গ্রামের আলু চাষী হাফিজ উদ্দিন (৫৭)। স্ত্রীসহ স্কুল পড়–য়া দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে আলু তোলার কাজ করছে ক্ষেতে। ক্ষেতের এক পাশে আলুর বিশাল স্তুপ দেখে বুঝা যায় ভালো ফলন হয়েছে । কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলে হাফিজ জানায় গত ৫বছর ধরে আলো চাষ করছেন। এই বছর ১০ কড়া জমিতে সে আলু চাষ করেছে। প্রায় অর্ধেক জমিতে আলু তোলা শেষ এতে আনুমানিক ৪০ মন হবে বলে আশা করছে।

হাফিজের ক্ষেতের পাশে অন্য একটি ক্ষেতে আলু তোলার কাজ করছে রিতা মজুমদার (৩৫)। প্রচন্ড রোদ্রের মধ্যে সে সহ ৫জন আলু তোলার কাজ করছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, এই বছর ২৪শতক জমিতে সে আলু চাষ করেছে সে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৩জন হওয়ায় সে দুই জন মহিলা শ্রামিক নিয়োগ দিয়েছে আলু তোলার জন্য। দিন শেষে সেই শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ১০ কেজি করে আলু দিয়ে দিতে হবে তাকে। এই বছর আলুতে বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রচন্ড তাফদাহের মধ্যেও কাজ করতে ক্লান্তি লাগছেনা তঁার। আলুর মূল্য কেমন পাচ্ছেন প্রশ্ন করলে রিতা জানায় সকাল থেকে ক্ষেতে কয়েকজন ব্যাপারী এসেছে । তারা ক্ষেত থেকে নিয়ে যাবে এজন্য মন ৫শত টাকা বলেছে কিন্তু সে রাজি হয়নি। সে কিছুদিন বাড়ীতে রেখে মূল্য বৃদ্বি পেলে বিক্রি করার চিন্তা করছে।

রিতার মত একই অবস্থা বুড়রচর ইউনিয়নের বড়দেইল গ্রামের আলু চাষী আলাতাফ, সাখাওয়াত, দিপংকর, সুনিল সর্দার, প্রদিপ ও নুরনবী সহ অনেকের। এরা সবাই গত ৫বছর ধরে বেড়ীর বাহিরে লোনা জমিতে আলু চাষ করে নিজেদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন করেছে। হাতিয়াতে যে কয়েকটি এলাকায় আলু চাষ হয় এর মধ্যে বড়দেইল এই গ্রামটি অন্যতম।

সরেজমিনে গিয়ে আলু ক্ষেতে দেখা হয় উপজেলা সদর ওচখালী থেকে যাওয়া আলু ব্যাপারী বেছু কারবারীর সাথে। বেছু কারবারী জানায় গত কয়েক বছর ধরে সে বড়দেইল গ্রাম থেকে আলু ক্রয়করে হাতিয়ার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি করে থাকে। এখন মৌসুম হওয়ায় দিনের বেশীরবাগ সময় কাটে তার বড়দেইলের এই আলু ক্ষেতে। গত কয়েকদিন থেকে সে প্রতিদিন ২শত থেকে ৩শত মন করে আলু ক্রয় করছে। অনেক চাষীর সাথে আলু ক্ষেতে থাকা অবস্থায় তার কন্ট্রাক হয়ে যায়। আবার অনেকের আলু তোলার পর দেখে শুনে কিনতে হচ্ছে। তার মত হাতিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে অনেক ব্যাপারী এসে এখান থেকে আলু কিনে নিয়ে যায়।

এদিকে বড়দেইলেরে বড় কয়েকজন আলু চাষীর মধ্যে নুরনবী (৫৫) একজন। আলাপকালে সে জানায়, ফলন ভালো হলেও বর্তমানে আলুর মূল্য কম। প্রতি কেজী আলুর বর্তমান মূল্য ১৫ টাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় হাতিয়াতে আলু কোল্ডস্টোরে রেখে বিক্রি করতে পারলে চাষীরা অনেক লাভবান হতো। এছাড়া তিনি কৃষি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আলু চাষে সহযোগীতা না করার অভিযোগও করেন।

এ ব্যাপারে বুড়িরচর ইউনিযনের ৬নং ওয়ার্ড বড়দেইল গ্রামের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন জানান, কৃষকরা বেড়ীর বাহিরে লোনা জায়গায় নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আলু চাষ করছে। সাধারনত বেড়ীর বাহিরে যেসব জমিতে লোনা পানি প্লাবিত হয় তাতে আলু চাষ ভালো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখানে বাম্পার ফলন হচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পেরৈসভার হাতিয়া উপজেলায় এই বছর আলু চাষ করা হয়েছে একশত ৮০ হেক্টর জমিতে। যাতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩হাজার ৫শত মেট্রিকটন। এর মধ্যে বুড়িরচর, চরকিং ও চরঈশ্বর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী আলু চাষ হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, হাতিয়াতে রবীশষ্য উৎপাদনে অনেক এগিয়ে। এর মধ্যে আলু ,বাদাম, খোসারী ডাল অন্যতম। আমারা বিভিন্ন ভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষন দিয়ে এসব কাজে উদ্বুদ্ধ করেছি। বর্তমানে আলুর মৌসুম চলতেছে। এবার হাতিয়াতে আলু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে