মাছ এবং মুরগীর সমন্বিত চাষ করে স্বাবলম্বী মান্দার আমজাদ হোসেন শেখ

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২১, ১৯:৪৮

মাহবুবুজ্জামান সেতু,মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি

 

মাছ এবং মুরগীর সমন্বিত  চাষ করে স্বাবলম্বী নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের দক্ষিণ মৈনম (শরির মোড়) গ্রামের মৃত শরিম উদ্দিন শেখের ছেলে আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন শেখ। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে,তিনি নিজেই। বর্তমানে তিনি সোনালী মুরগীর খামার করে  অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই সফল । বর্তমানে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও প্রভিটা ফিড লিমিটেড রাজশাহীতে কর্মরত উচ্চ শিক্ষিত ছেলে জামশেদ আলীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুকুরের উপরে গড়ে তুলছেন সোনালী  মুরগীর খামার। একই সাথে পুকুররে পানিতে সমন্বিত মাছ চাষ করছেন তিনি।

 

তার সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় তাদের পরিবারে অনেক অভাব ছিলো। এরপর সেই অভাব দূর করার জন্য নিজ উদ্যোগে এবং ২০০৮ সালে ৫শ টি মুরগী দিয়ে শুরু করেন খামার।

 

 ২০২১ সালে তার খামারে মুরগী হয়েছে  প্রায়  ৫/৬ হাজার। পাশাপাশি খামারটি পুকুরের উপর হওয়ায় মুরগীর বিষ্ঠা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করনে। বর্তমানে  তার খামারে  ৫ /৬হাজার মুরগি রয়েছে । আবার পুকুরে রয়েছে  অর্ধ কোটি টাকার  মাছ।

 এখন তিনি অনেককে  চাকরি দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কর্মসংস্থান  করছেনে ৫ জন লোকের। তাঁর সাফল্য অনুপ্রাণতি করেছে অন্যদেরও। আশপাশের এলাকার শতাধিক ব্যক্তি এখন  খামার করছেন । মুরগী ও মাছের সমন্বিত চাষ  আছে অনেকের।

 

আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন শেখ বলেন, ২০০৮ সাল থেকে অল্প পরসিরে ব্রয়লার মুরগী চাষ শুরু করা হয়।পরে আস্তে আস্তে বড়  আকারে সোনালি মুরগী চাষ শুরু করা হয়। এই মুরগী গুলোর গন্ধ কম,তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং এবছর দামও ভালো আছে। তবে  সরকারিভাবে যদি কোন সহযোগীতা পাই অথবা বিভিন্ন এনজিও থেকে স্বল্প সুদে ঋৃণ পাই তাহলে আরও বড় আকারে মুরগী চাষ করা সম্ভব হবে।

 

তিনি আরো বলেন যে, ২মাস পালনের পর প্রতিটি মুরগীর ওজন হয় প্রায় ৭শ-৮শ গ্রাম থেকে ১কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজি মুরগী ২৮০থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছ। এরকম দাম থাকলে প্রতিদিনের গড় আয় হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ।

 

 সাধারণত সোনালী মুরগীর  বাচ্চা বড় হতে সময় লাগে মাত্র ২মাস। ২মাস পর বিভিন্ন  আড়তে পাঠিয়ে দেন সেগুলো । বিক্রয়ের পর আড়তদারেরা  ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। আবার বিভিন্ন  এলাকা থেকে  পাইকাররাও এসে মুরগী কিনে  নিয়ে যান। তার মুরগী বিক্রির আড়তগুলোর  মধ্যে অন্যতম হলো রাজশাহী, রাজধানীর কারওয়ান বাজার  এবং যাত্রাবাড়ী । মুরগীর  বিষ্ঠার হালকা একটু গন্ধ নাকে আসার আগইে চোখ যাবে  জলে। তাতে নানা জাতের  মাছ খলবলিয়ে  বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে মাগুর এবং তেলাপিয়া মাছ। তিনি জানান, তাঁর খামারে এখন ৪/৫ জন স্থায়ী কর্মী আছে। দৈনিক মজুরিতে  কাজ করেন আরও ১২ থেকে ১৫ জন।

 

 কথা হয় মুরগীর খামারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আলহাজ্ব আমজাদ হোসন শেখ এবং কর্মী সাগর, শাকিল এবং রাব্বিসহ কয়েকজনের  সঙ্গে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ মুরগীকে  খাবার দিচ্ছেন এবং কেউ কেউ মুরগীর পরিচর্যা করছেন। তাদের মধ্যে সাগর নামে একজন জানিয়েছেন যে, তিনি ২০০৮ সালে থেকে খামারে কাজ করেন, সেসময়  তাদের সংসারে অনেক অভাব ছিলো। ২০০৮ সালে খামারের কাজে নিয়োগ পান তিনি। তারপর থেকে আস্তে আস্তে  মুরগী বাড়তে থাকে আর তার বেতন ও বাড়তে থাকে। এখন তার পরিবার স্বচ্ছল।

 

উপজলো প্রাণসিম্পদ কর্মকর্তা  ডা. অভিমান্য চন্দ্র জানান, এ উপজেলায় ৪শ২১ টি মুরগীর খামার রয়েছে। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক খামার বন্ধ আছে। আবার অনেক খামারি রমজান মাসের রোজা উপলক্ষে  নতুন ভাবে খামার শুরু করতে  আগ্রহী হচ্ছেন এবং অনেকে সফলতা পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমাদের নজর আছে।  অনকে খামারী  কারিগরি প্রশক্ষিণ না নিয়ে মুরগী পালন করছে।এর ফলে এসাইটসি,হারডসিসি ও এমোনয়িা গ্যাস রোগে ভূগছে  মুরগী এতে ক্ষতগ্রিস্ত হচ্ছে খামারী। অপরদিকে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত খামারীরা মুরগীকে নিয়মিত ভ্যাক্সিন দেওয়ায় সুফল পাচ্ছেন অনেকে।

 

আলহাজ্ব আমজাদ হোসন শেখ একজন ভালো খামারী এবং উদ্যোক্তা। এ উপজেলায়  সেনালী মুরগী এবং মাছ চাষের সমন্বিত  খামারের মধ্যে তারটাই সবচেয়ে বড়। এ উপজেলার  তরুনেরা  তাকে নিয়ে গর্ব করতে পারনে এই ভেবে যে একজন বয়বৃদ্ধ মানুষও কৃষিনির্ভর সফল উদ্যোক্তা হতে পারেন।

 

যাযাদি/ এস