বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ চাষ করে কোটিপতি

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ এপ্রিল ২০২১, ২০:১৪

মহাজনি সুদে ধার করা ৩০ হাজার টাকা আর ভাড়া করা কয়েকটি পুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু করে তিনি আজ কোটিপতি। শহরতলি শম্ভুগঞ্জের চরপুলিয়ামারী এলাকায় গড়ে তুলেছেন ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স। কিনেছেন ২০ একর জমিও।

পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছা আর দৃঢ় মনোবলই এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে মাছচাষি নুরুল হককে। মাছ চাষে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার, ১৯৯৮ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (রৌপ্য), ২০০৯ সালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক (স্বর্ণ) ও ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক (ব্রোঞ্চ) পেয়েছেন।

মাছ চাষ করে ময়মনসিংহে এখন সফল ব্যক্তি এ কে এম নুরুল হক। ১৯৮৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু চাকরির পেছনে না ছুটে মাছ চাষে ঝুঁকে পড়ে তিনি পৌঁছেছেন সফলতার শীর্ষে।

নুরুল হক বলেন, শুরুতে এ কাজে পারিবারের বাধা ছিল। গণিতে অনার্স পাস করে অন্য চাকরি না করায় বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তিন বছর থেকেছি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার বারান্দায়। পরে শুরু করি মাছ চাষ। অনেক কষ্টের পর সফলতা আসতে শুরু করল। তখন অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছিলেন এবং উৎসাহ জুগিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে পুকুরে রেণু থেকে পোনা উৎপাদনের কাজে হাত দিলেও চাহিদা বাড়ায় ১৯৯৩ সালে ব্রহ্মপুত্র ফিশ ফিড কমপ্লেক্স নামের একটি হ্যাচারি গড়ে তোলেন। এখানে কার্প জাতীয় রেণু উৎপাদন করা হতো। ১৯৯৮ সালে দেশি মাগুর ও ১৯৯৯ সালে শিং মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে এটি। এরপর ২০০১ সালে পাবদা, ২০০৩ সালে থাই কই মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হন।

২০১০ সাল থেকে তেলাপিয়ার সুপার পুরুষ থেকে শুধু পুরুষ পোনা উৎপাদন, ২০১৫ সালে গাং মাগুর ও ২০১৮ সালে মলা মাছের কৃত্রিম প্রজনন শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২০ সাল থেকে রানি মাছ নিয়ে কাজ করছেন নুরুল হক।

সফল এসব মাছচাষি যেমন নিজেরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন। সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থানও। রাখছেন অবদান দেশের অর্থনীতিতে। মাছের পুকুর ও হ্যাচারিতে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে আজ তারা খুশি, যা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো জেলায় মাছ চাষ হয়, তার মধ্যে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। ইতোমধ্যে আমরা তিন হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আরও দেড় হাজার চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্রঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তারা যাতে বড় ঋণ নিতে পারেন, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

যাযাদি/এসআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে