শ্যামনগরে খরায় রসালো ফল তরমুজ ছোট ও বাঁকা হয়ে যাচ্ছে

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৬

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

 

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় উৎপাদিত রসালো ফল তরমুজের সুনাম জেলা উপজেলার বাইরে রয়েছে। উপজেলার ধূমঘাট গ্রাম ও কৈখালী ইউনিয়নের উৎপাদিত তরমুজের স্বাদ সকলের অজানা নয়। বাজারে ক্রেতাদের মুখে শোনা যায় ধূমঘাট ও কৈখালীর তরমুজ পাওয়া যাবে কি না ? সুস্বাদু রসালো ফল তরমুজ এবার খরায় স্বাদ ও সাইজে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। খরার কারণে তরমুজ চাষিদের এবার উৎপাদন খরচ উঠবে কি না এ নিয়ে চিন্তায় আছেন।

 

উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলী হাসান জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় বারোশত বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে উপজেলার কৈখালী ইউপিতে। এছাড়া ঈশ^রীপুর ইউপির ধূমঘাট, কাশিমাড়ী, মুন্সিগঞ্জে তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। কৈখালী ইউপির বোশখালী, পশ্চিম কৈখালী বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে এবার। তরমুজচাষি কৈখালী ইউপির আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি নিজে ১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। কিন্তু এ বছর প্রচণ্ড খরার কারণে তরমুজের সাইজ ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং তরমুজ মুঠিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে নিচের দিকে। তরমুজচাষি হাফিজুর রহমান বলেন, খরার কারণে তরমুজে ভাইরাস লেগেছে। এর ফলে তরমুজের ভিতরে গাঢ় লাল রং হচ্ছে না এবং মিষ্টতা কমে যাচ্ছে।

 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোদাচ্ছের বিল্যা বলেন, উপজেলায় গতবার তরমুজ চাষ হয়েছিল মাত্র ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ছিল ৩০ মেট্রিক টন। গতবার চাষিরা ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার তিন গুণ জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। বর্তমানে তরমুজ প্রতি কেজি বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।

 

উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জিয়াউল হক জিয়া বলেন, অন্যান্য বছর শ্যামনগরে বৃষ্টির কারণে তরমুজের ওজন ছিল ১০ থেকে ১২ কেজি। এবার বৃষ্টির অভাবে তরমুজের ওজন হয়েছে ৪ থেকে ৫ কেজি। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার তরমুজ বড় হওয়ার সম্ভাবনা নাই; শুকিয়ে যাচ্ছে তরমুজ ক্ষেত ও তরমুজ। তিনি প্রকৃতিনির্ভর বৃষ্টির ওপর ভরসা করে উপজেলার শ্যামনগর ইউপি, কৈখালী, কাশিমাড়ী, মুন্সিগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকায় চাষিরা তরমুজ চাষ করেছেন শত শত বিঘা জমিতে। কিন্ত শ্যামনগরে ভূগর্ভস্থ পানি না পাওয়ায় চাষিরা নিজস্ব পুকুর বা জলাশয়ের পানির ওপর নির্ভর করে তরমুজসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে সেটিও শেষ হওয়ায় এখন চাষিদের অপেক্ষা এক পশলা বৃষ্টি। তিনি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে পুকুর খননের দাবি জানান। 

 

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এস এম এনামুল ইসলাম বলেন, পানি সংকটের কারণে শ্যামনগরে তরমুজের সাইজ ছোট হচ্ছে, বাঁকা হচ্ছে। আবার কোথাও পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, সরেজমিনে কৈখালী ইউনিয়নের কয়েকটি তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তরমুজ ফসলের ক্ষেতে পানি সংকটের অভাব মেটাতে সন্ধ্যার পর পানি স্প্রে করতে পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে ও মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাকড়নাশক  থিওভিট সঠিক মাত্রায় স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাষিদের।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন বিশেষ করে নাইট্রোজেন থাকে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার তরমুজ ফসল কাক্সিক্ষত উৎপাদন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

জানা যায়, উপজেলায় উচ্চফলন জাত ভারতের ভিফটপ, ড্রাগন, পাকিজা, বাংলালিংকসহ অন্যান্য জাতের তরমুজ চাষ হয়ে থাকে।

 

শ্যামনগরের তরমুজ চাষিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনকারীরা জানান, ফসলের ক্ষেতে একটু বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে উৎপাদিত ফসলের মাত্রা বেড়ে যেত সাথে সাথে ফসলের স্বাদও বেড়ে যেত।

 

 উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম এনামুল ইসলামসহ চাষিরা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউপির খালগুলোতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা হলে কৃষি ফসল উৎপাদনে এক অনন্য ভূমিকা রাখবে। সাথে সাথে উৎপাদিত খাদ্যে উপজেলার মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে মতামত প্রকাশ করেন। 

 

যাযাদি/ এস