​ঝিনাইদহে লু হাওয়ায় ১১৭ হেক্টর জমির ধান পুড়েছে

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২১, ২০:২১

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

 

কালবৈশাখী ঝড় আর দাবদাহে বয়ে যাওয়া লু হাওয়া বা গরম বাতাসে ঝিনাইদহে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই গরম হাওয়ায় সবেমাত্র শিষ বের হওয়া দুধভরা ধান শুকিয়ে সাদা হলুদ বর্ণ ধারণ করে পুড়ে যাচ্ছে। গরম বাতাসে জেলার ৬ উপজেলায় ১১৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবারের ধানে চিটা বেশি হবে এবং ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। গত ৪ এপ্রিল বিকালে হঠাৎ ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের আগে পরে বৃষ্টি না হলেও গরম হাওয়া বইতে থাকে। গরম হওয়ায় জমির ধান নষ্ট হয়েছেÑ বলছেন কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ধান রোপণ হয়েছে ৭৭ হাজার চারশ ৪০ হেক্টর। আর মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই এসব জমির ধান কাটা শুরু হবে। এরই মধ্যে দাবদাহ ও ঝড়ে ১১৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়া জমির মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আট হেক্টর, কালীগঞ্জে ১০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে আট হেক্টর, মহেশপুরে ৩০ হেক্টর, শৈলকুপায় ১৩ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ৪৮ হেক্টর। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে হরিণাকুন্ডু উপজেলায়। গরম হাওয়ায় ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষকের মুখের হাসি হারিয়ে যেতে বসেছে।

 

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এটা ধানের কোনো রোগ না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা যায়। তবে ঝড়ের আগে গরম দমকা হাওয়ায় পুড়ে যাওয়া ধানের জমিতে এক ইঞ্চি পরিমাণ পানি বেঁধে পটাসিয়াম দিতে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। 

 

জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের কৃষক স্কুল শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, গত ৪ এপ্রিল বিকালে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। সঙ্গে প্রচণ্ড ধূলি আর গরম হাওয়া বইতে থাকে। বৃষ্টি না হওয়ায় চলছে টানা দাবদাহ। ঝড়ের দুই দিন পর মাঠে গিয়ে দেখা যায় কিছু কিছু জমিতে সবুজের পরিবর্তে ধানের শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে এবার ধানের ফলন কম হবে।

 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম রবি জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে তাার ১৩ বিঘা জমির ধান রয়েছে। কয়েকদিনে এমনিতে এ অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের দুদিন পর মাঠে গিয়ে দেখি যেসব জমির ধানে দুধভাত ছিল সেসব ধানের শিষে সাদা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এতে ফলন কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা এই কৃষকের। 

 

মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি ইরি মৌসুমে মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। সম্প্রতি গরম হাওয়া আর কালবৈশাখী ঝড়ে প্রতিটা জমির জাগায় জাগায় ধান সাদা বর্ণ হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঝড়ের পরেই এই চিটার পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে।

 

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, ইতোমধ্যে তারা মাঠে গিয়ে ধানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ অঞ্চলে টানা দাবদাহের পর গত ৪ এপ্রিল বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের আগে গরম দমকা বাতাস বয়ে যায়। অতিমাত্রায় গরম বাতাসের কারণে দুধভাত হওয়া শিষগুলো পুড়ে যায়। এছাড়া ধান গাছে শিষ বের হওয়ার পর দুধভরা অবস্থায় ৩৫ ডিগ্রির উপরে বাতাসের সঙ্গে তাপমাত্রা থাকায় কিছু কিছু ধানের শিষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান  তিনি।

 

যাযাদি/এস