বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভরা মৌসুমে হলুদের দাম নেই : চাষিরা বিপাকে

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
  ১২ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৪

রংপুরের কাউনিয়ায় বিভিন্ন গ্রামে হলুদের ভালো ফলন হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে বাজারে হলুদের দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা তাদের উৎপাদিত হলুদ পানির দরে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে বাজারে ক্রেতার অভাবে হলুদ বিক্রি করতে না পারায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। অনেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় হলুদ শুকিয়ে শুট করে রাখছেন।

উপজেলার পল্লীমারী গ্রামের চাষি আকবর আলা (৪৮) জানান, গত মৌসুমে ৪০ কেজি (এক মণ) কাঁচা হলুদ ১২ শ থেকে ১৫ শ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে মৌসুমের শুরুতেই সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ শ থেকে ৬ শ টাকা দরে। এ কারণে চাষিরা ক্ষেত থেকে আর্থিক ক্ষতির ভয়ে হলুদ না তুলে ক্ষেতেই ফেলে রেখেছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ১৮১ বিঘা জমিতে হলুদ চাষাবাদ হয়েছে। গত বছর হলুদের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার কোমর বেঁধে হলুদ চাষে মাঠে নেমে পড়ে। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ শত টাকা দরে বিক্রি হয়। এবারে ক্রেতার অভাবে বাজারে হলুদের দরপতন ঘটায় তা মাত্র ভালোটা ছয়শ টাকায় এবং খারাপটা সাড়ে চারশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাষিদের মুখের হাসি ম্লান হতে চলেছে।

নাজিরদহ গ্রামের হলুদ চাষি ইব্রাহিম আলী জানান, গত বছর দুই হাজার পাঁচ শত টাকা মণ দরে হলুদ কিনে দুই বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি ভালো দাম পাওয়ার আশায়, কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। সাধু গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী জানান, গত বছর পাঁচ বিঘা জমির হলুদ বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা পেয়েছি। তাই এবার আরও কিছু জমি লিজ নিয়ে ৯ বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি। কিন্তু এবারে হলুদের দাম পাঁচ গুণ কমে যাওয়ায় মাথায় বাজ পড়েছে।

ধুমগড়া গ্রামের চাষি সেকেন্দার আলী জানান, গত বছর হলুদের দাম ভালো পাওয়ায় এবার চার বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছি। এবার হলুদের ফলনও হয়েছে ভালো, তবে বাজারে দাম নেই। মনের গোসায় হলুদ ক্ষেত থেকে উত্তোলন করছি না।

খানসামা হাটের স্থানীয় হলুদ ব্যবসায়ী হাবিবুর জানান, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে হলুদ ব্যবসায়ী এসে এ অঞ্চলে থেকে শত শত মণ হলুদ ক্রয় করে নিয়ে যায়। কিন্তু এবার এখনো কোনো ব্যবসায়ী হলুদ কেনার জন্য আসেনি। ফলে অনেক চাষি হাট-বাজারে হলুদ বিক্রি করতে এসে ক্রেতার অভাবে হলুদ ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। কেউবা ফরিয়া পাইকারের কাছে পানির দরে হলুদ বিক্রি করে দিচ্ছে।

শিক্ষিত ও সামর্থ্যবান কয়েকজন কৃষক বলেন, ভরা মৌসুমে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তারা বলেন, ধান, আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে ভরা মৌসুমে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে, সেই সঙ্গে ফসলের আবাদও বাড়বে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছর হলুদের দাম ভালো পাওয়ায় চাষরা একে অপরের দেখাদেখি এবার ব্যাপক হারে হলুদ চাষাবাদ করেছে আর চাষাবাদ বেশি হওয়ায় ভরা মৌসুমে বাজারে দাম কিছুটা কমে গেছে। তবে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগের প্রকল্প চলমান রয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে