সুবর্ণচরে লোনা জোয়ার, আতংকে কৃষক : বেড়ীবাঁধ সংস্কারের দাবি

প্রকাশ | ০২ মে ২০২১, ১৯:২৭

আব্দুল বারী বাবলু সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি

নোয়াখালীর কৃষি জনপদ নামে খ্যাত উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরে বেড়ীবাঁধ ভেঙে গত কয়েক বছর যাবৎ বারবার ভুলুয়া নদীর লোনা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ফসলে মাঠ। বেড়ীবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতিবছর রবি মৌসুম ও আমন মৌসুমে ভুলুয়া নদীর লোনা জোয়ার ডুকে নষ্ট হয়ে যায় শত শত একরের উৎপাদিত ফসল। সামনে বর্ষা মৌসুম তাই  লোনা জোায়ার আতংক এঅঞ্চলের কৃষকের চোখে মূখে।

 

রামগতি ও সুবর্ণচর উপজেলার সীমানা ঘেসে বয়ে গেছে মেঘনার শাখা নদী ভুলুয়া। ভুলুয়ার নদীর পূর্ব পাশে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের পশ্চিম সীমানায় নদীর পাড় হয়ে উত্তর-দক্ষিনে রয়েছে বেড়ীবাঁধ। ঘুর্ণিঝড় বুলবুল এর সময় প্রবল জোয়ারে সুবর্ণচর সীমানায় জুবিলী ইউনিয়নের মধ্যম ব্যাগ্যা গ্রামে বেড়ীবাাঁধের প্রায় ৮ শত মিটার ভেঙে যায়।

 

জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর লোনা জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার পর কৃষকদের দাবির মুখে সংস্কারের কথা বললেও আজও সংস্কার হয়নি ভেঙে যাওয়া বেড়ীবাঁধ। ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ঘুর্ণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে প্রবল জোয়ারে বেড়ীবাঁধটি ভেঙে যায়।

 

সরেজেিন দেখাযায় বেড়ীবাঁধের উত্তর- দক্ষিনে প্রায় ৭/৮ মিটার বেড়ীবাঁধ ভেঙে গেছে। জোয়ারের সময় প্লাবিত হচ্ছে ফসলের মাঠ। জোয়ার প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি রবি মৌসুমে মধ্যম ব্যাগ্যা গ্রামের শতশত একর মাঠের ফসল লোনা জোয়ারের পানিতে জ্বলসে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে পানের বরজ। লোনা পানিতে ভেসে গেছে পুকুরে মাছ। বসত বাড়িতে উঠছে পানি ,শিশু,বদ্ধ ও প্রতিবন্ধিরা আছে জীবন ঝুঁকিতে। ফসল ঘরে তুলতে না পারায় প্রায় পরিবারে কপালে দুরচিন্তার ভাজ কারণ বেশিরভাগ কৃষক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে কৃষিকাজ করেছে। বেড়ীবাঁধ সংস্কার না করায় কয়েক বছর ধরে এভাবেই চলছে এ অঞ্চলের কৃষক।

 

কৃষানী জাহানারা বেগম যায়যায়দিনকে জানান, গত কয়েক বছরের ন্যায়  এবারও ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋন নিয়ে সয়াবিন ,মরিচ,ঢ়েড়স ও ডাল চাষ করেছিলাম। হঠাৎ ২ সপ্তাহ পূর্বে ভরা-কাটালে জোযারের পানি ডুকে ক্ষেতের সব ফসল ধ্বংস করে দিয়েছে। ঋনের টাকা কিভাবে শোধ করবো এবং কিভাবে সংসার চলবে জানি না। সামনে আসছে বর্ষা মৌসুম ,আমরা আমন চাষও করতে পারবো না। আক্ষেপ করে বলেন আমাদের দেখার কেউ নেই। বেড়ীবাঁধ সংস্কার না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

 

মধ্যম ব্যাগ্যা গ্রামের মো: মনজুর আলম যায়যায়দিনকে বলেন, বেড়ীবাঁধ সংস্কার করার জন্য আমরা বার বার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি শুধু আশ্বাস মিলে বেড়ীবাঁধ সংস্কার হয় না। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলা কৃষি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করেছে যদিও অনেক কৃষকের নাম তালিকায় আসেনি। এ এলাকার কৃষকদের পিঠ মাটিতে মিশে গেছে । সামনে বর্ষা মৌসুম কৃষকের ক্ষতি পূরনের চেয়ে বেড়ীবাঁধ খুবই জরুরী।

 

বেড়ীবাঁধ সংস্কার বিয়য়ে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন র্বোডের প্রকৌশলী মো: নাসির উদ্দিন যায়যায়দিনকে  বলেন, ভেড়ীবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ সংস্কার করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তবে ঠিকাদার এখনই কাজ করতে রাজি হচ্ছেনা। এই প্রকৌশলীর দাবী ব্লক না দিলে বেড়ীবাঁধ দিয়ে লাভ হবে না আগামী বর্ষা মৌসুমে আবারও ভেঙে যেতে পারে।

 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হারুন অর রশীদ যায়যায়দিনকে বলেন, লোনা জোয়ার প্লাবিত এলাকা আমি পরির্দশন করেছি। লোনা জোয়ার ডুকে কৃষকদের প্রায় ১শত হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা নিরুপন করা হয়েছে। বেড়ীবাঁধ সংস্কার করার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালী প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি বেড়ীবাঁধ সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছেন। 

 

যাযাদি/এস