নীলফামারীর মামুন নার্সারী ব্যবসায় এক নব দিগন্তের দ্বার উম্মোচন করেছে

প্রকাশ | ২২ মে ২০২১, ১৭:৪৪

এসএপ্রিন্স, স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী

নিম গাছের চারা পাল্টে দিয়েছে লেবু মিয়ার ভাগ্যের চাকা। ডিঙ্গি নৌকার মতো তরতর করে দুর্বার গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার নার্সারী ব্যবসার এই নৌকা। এক বিঘা জমির নিম গাছের চারা দিয়ে শুরু করা তার এই ছোট্র ব্যবসা আজ ২৫বিঘায় রুপ নিয়েছে। তার নার্সারীতে কাজ করেজীবিকা নির্বাহ করছে ১৫টি পরিবার। লেবু মিয়ার মতো আজ তারাও বেশ স্বচ্ছল।

 

নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের কচুকাটা হাইস্কুল সংলগ্ন বন্দরপাড়া এলাকার লেবু মিয়া জীবিকার তাগিদে এক সময় ফেরি করে কাপড়ের ব্যবসা করতো। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে এ ব্যবসায় তেমন একটা মুনাফা হতো না। যা হতো তা দিয়ে টেনে টুনে চলতো সংসার। এ ব্যবসা করাকালীন খুজতে থাকেন ভিন্ন ব্যবসা। শুরু করেন পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা। এ ব্যবসা কিছুদিন করার পরে আশানুরুপ মুনাফা না হওয়ায় সেটিও ছেড়ে দিয়ে এক বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তাতে নিম গাছের বীজ রোপন করেন। এই এক বিঘা জমির নিম চারা বিক্রি করে তার প্রচুর মুনাফা হয়। এতে তিনি ঝুকে পড়েন নার্সারী ব্যবসার দিকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে নিজের আট বিঘা ও অন্যের ১৭বিঘা জমি নিয়ে নার্সারী ব্যবসা করতে থাকেন। আজ তিনি একজন সফল নার্সারী ব্যবসায়ী।

 

স্ত্রী ও দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে লেবু মিয়ার সংসার। এক সময়ে অভাব অনটন ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অভাব অনটনের কারনে বড় ছেলে হারুন মিয়াকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি। এ কষ্ট আজ তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। ছোট ছেলে এ আর মামুন রংপুর সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছে। মেয়ে মাহামুদা আক্তার লিহা নীলফামারী সরকারী মহিলা কলেজে এইচএসসির  ছাত্রী। ছোট ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পেরে আজ গর্বিত বাবা।  

 

লেবু মিয়া জানান, নার্সারী ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে সক্রিয়ভাবে তাকে সহযোগিতা করছে ছোট ছেলে এআর মামুন। তার শ্রম আর মেধা নার্সারী ব্যবসাকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও বন বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান নানান পরামর্শ দিয়ে তাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। প্রতিবছর জেলা পর্যায়ে চারা মেলায় তার এ আর মামুন নার্সারী অংশ নেয় এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অর্জন করে। তার নার্সারীর নাম আজ সকলের মুখে মুখে।

 

তিনি আরও জানান, এখন গাছ থেকে কলম (গ্রাফটিং) করে নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। নার্সারীতে ফলজ, বনজ, ভেজষ ও শোভাবদ্ধনসহ ছয়শ’র বেশী দেশী ও বিদেশী জাতের চারা রয়েছে। নার্সারীতে ফলজ গাছের মধ্যে অন্যতম কমলার জাত সাদকি, দাজিলিং, পাকিস্তানী, থাই ও জর্ডান, মালটার জাত বাড়ী-১, বাউ-৩, ওয়াশিংটন নেভাল, সাউথ আফ্রিকান ইয়োলো, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, থাই জমবুরা, এবাকাডো ফল, ম্যাঙ্গোস্টিন ফল গাছ, এফ্রিকট গাছ, পিনাটবাটার, ফুলচান, রামবুটান, মালবেরী, ভেজষ গাছ যেমন ক্যানসার প্রতিরোধক করোসল গাছ, ননীফল গাছ, ডায়াবেটিক গাছ যেমন গোয়নূরা প্রোগাম্বেস, ডাইবেটিক আম গাছের চারা রয়েছে। গাছ ও প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রতিষ্ঠিত এ নার্সারী দেখতে প্রতি মৌসুমে কৃষি ও বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে তাকে দিয়েছে উৎসাহ।

 

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তার নার্সারীর সফলতা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। মামুন নার্সারী আজ অনুকরনীয়। তার নার্সারী মতো আরও অনেকে নার্সারী ব্যবসায় এগিয়ে এলে অনায়াসেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। 

 

যাযাদি/ এস