পাকুন্দিয়ায় উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২১, ১৯:৫৯

হুমায়ুন কবির, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় বেশির ভাগ খামারিরা সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। কয়েক বছর ধরে হোয়াইট জার্মান, নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষক ও খামারিরা।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ১ টি পৌরসভায় ছোট-বড় মিলিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়ার খামার রয়েছে প্রায় ৮৬ টি। এসব খামারে ও গৃহপালিত গরু, ছাগল, ভেড়া আছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজারের অধিক। এসব গবাদি পশুর খামারগুলোতে গো-খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে উপজেলায় শতাধিক একর জমিতে উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাসের চাষাবাদ করছে কৃষক ও খামারিরা।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নারান্দী, এগারসিন্দুর , সুখিয়া, চন্ডিপাশা, জাঙ্গালিয়া, চরফরাদী, হোসেন্দী, বুরুদিয়া ইউনিয়ন সহ পাকুন্দিয়া পৌরসদরের মধ্য পাকুন্দিয়া, আনোয়ারখালী, চর পাকুন্দিয়া, শ্রীরামদীসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘাসের ক্ষেত রয়েছে প্রচুর। যে সকল খোলা মাঠে ধান চাষ দেখার কথা সেখানে শুধু ঘাসের বিচরণ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে আখ ক্ষেত। আসলে তার সবই ঘাস।

 

অপরদিকে অনেক খামারিদের দাবি, গোখাদ্য হিসেবে আগে ধানের খর ও তুলা ব্যাবহার করা হত। এখন তুলা ও ধানের খরের দাম অনেক বেশি। এতে করে দুধ বা মাংস উৎপাদনে খরচ বেশি হত। এখন তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরামর্শ ও সহযোগীতায় উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাসের চাষাবাদ করছে। এতে করে পরিবারের স্বচ্ছলতা আসছে। উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাস চাষে ঝামেলা কম লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই এ ঘাস চাষাবাদ করছেন। বিগত ২ বছর ধরে পাকুন্দিয়া উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাস। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের মিষ্টির দোকানসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভালো দামে দুধ কেনায় নতুন নতুন খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। একারণেই উপজেলায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাসের চাষ।

 

পৌরসদরের খামারি আলী হায়দার রাসেল বলেন, ‘আমরা গরু পালন করি তাই ঘাস চাষ করি ২/৩ বছর যাবত। কয়েক বছর যাবৎ বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ধানের খড় ও তুলার দাম বেশি হওয়া গরুর খামার দিয়ে খুব একটা লাভবান হচ্ছিলাম না তারপর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে গিয়ে এব্যাপারে পরামর্শ সহযোগীতা চাইলে তারা আমাকে উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাসের চারা দেয়। প্রথমে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩০ শতাংশ জমিতে হোয়াইট জার্মান ঘাস চাষ করে বেশ লাভবান হই। এর পর থেকে আস্তে আস্তে প্রায় ১০০ শতাংশ জমিতে ঘাস চাষ করি। বছরে সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাসের জমি থেকে ৭-৮ বার ঘাস কাটা যায়।’ এখন আমার বছরে গো-খাদ্য থেকেই লাভ হয় ৩০/৩৫ হাজার টাকা।

 

আরেক খামারি ইকবাল হাসান শেলিম জানান, ৭/৮ বছর আগে বিদেশ থেকে দেশে এসে একটি গরুর খামার দেই। প্রথমে বেশ লাভবান হচ্ছিলাম কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ ধানের খড়ের দাম মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় গরুর খামার নিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলাম তারপর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে গিয়ে পরামর্শ চাইলে তারা আমাকে উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার ও পাকচং আবাদের পরামর্শ দেয়। এখন আমার প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে সুপার নেপিয়ার, পাকচং আছে। যা আমার খামারের গরুর খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়। এখন প্রতি বছর গো-খাদ্য থেকেই লাভ হয় ৪০/৫০ হাজার টাকা।

 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মাহফুজ উদ্দিন ভুইয়া জানান, “মায়ের দুধের যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি গবাদি প্রাণী পালনে উন্নত জাতের ঘাস চাষের কোনো বিকল্প নেই।খামারিদের মাঝে ইদানীং উন্নত জাতের ঘাস চাষের প্রতি চাহিদা লক্ষ করা যাচ্ছে। সুপার নেপিয়া, পাকচং ঘাস দুগ্ধ বৃদ্ধিসহ প্রাণীরোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। সেই সাথে আর্থিক লাভবান তো রয়েছেই।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আনোয়ার হোসন বলেন, আমাদের স্লোগান হল "নো ঘাস নো গরু" যাদের একটি গবাদি প্রাণী আছে তাদেরকে ও ঘাস চাষের পরামর্শ দেই। পাকুন্দিয়া উপজেলায় যে পরিমাণ গবাদি প্রাণীর খামার রয়েছে এসব খামারিদের প্রয়োজনে তারা নিজেরাই নেপিয়ার ঘাস চাষ করে। আমরা তাদের নিয়মিত ঘাস চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রকৃতপক্ষে এ ঘাস একটি লাভজনক চাষাবাদ।

 

যাযাদি/এস