বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাউনিয়ায় পতিত জমিতে মাল্টা চাষে স্কুল শিক্ষকের সাফল্য

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
  ১২ জুন ২০২১, ২০:০২

বাড়ীর পাশে পতিত জমিতে এক সময় কোন ফসলেই হতো না। কিন্তু সেই পতিত জমিতে মাল্টা বাগান করে রংপুরের কাউনিয়ায় সফলতা পেয়েছেন স্কুল শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন। তার বাগানের ছোট ছোট গাছে এখন ঝুলছে শত শত মাল্টা। উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের মীরবাগ এলাকার ধর্মেশ্বর গ্রামে দক্ষিণ ধর্মেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজে ব্যাপক উৎসাহী।

স্কুলের কোল ঘেষে শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনের বাড়ী। আর বাড়ীর পিছনে পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান। তিনি বলেন, বছর চারের আগে ছোট ছেলের জন্য মাল্টা কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন। তখন বাজারে মাল্টার ভালো দাম দেখে বাড়ীতে এসে মাল্টার বাগান করার পরিকল্পনা করেন। এরপর স্ত্রী ও সন্তানদের উৎসাহে ২০১৭ সালের বাড়ির পাশে অনাবাদি পতিত ১৬ শতাংশ জমি প্রাকৃতিক উপায়ে উর্বর করে বারি মাল্টা-১ জাতের ৩৬ টি চারা রোপন করি। গত বছর ২২টি গাছে ফল আসলেও এবছর প্রায় সব গাছেই ফল এসেছে । এক একটি গাছে ২০০ থেকে ২৫০ টি করে মালটা ধরেছে। কিছুদিন পরই গাছে মাল্টা পাকতে শুরু করবে। এবছর নিজের বাগানে মাতৃগাছ থেকে বাকল দিয়ে ‘গ্রাফটিং’ করে প্রায় তিন শতাধিক মাল্টা চারা উৎপাদন করেন। আর এসব মাল্টার চারা আরো অনাবাদি পতিত ৫৯ শতাংশ জমিতে রোপন করবেন।

মোফাজ্জল হোসেন বলেন, মাল্টা গাছের চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। কিন্তু তিন বছর পর একটি গাছে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল ধরা শুরু করে। তিন বছর পরে গাছ প্রতি মৌসুমে ৩৫০ থেকে ৪০০টি মাল্টা ধরে। গত বছর তিনি ২২ টি গাছের মাল্টা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের বিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এবছর মাল্টা বিক্রি করে প্রায় এক থেকে সোয়া লাখ টাকা আয় হবে। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক মাল্টাবাগান করার আগ্রহ প্রকার করেছেন।

মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী রাসনা বেগম বলেন, গত তিন বছর ধরে ঘর সামলানোর পাশাপাশি স্বামীর মাল্টাবাগান পরিচর্যার কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলের নামে মোফাজ্জল তাঁর বাগানের নাম রেখেছেন ‘রাশেদ-রাতুল মাল্টা গার্ডেন।

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন মাল্টা বাগান পরির্চযার পাশাপাশি পোকা মাকড় আক্রমণ রোধে বালাইনাশক স্প্রে করছেন।

ধর্মেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজার রহমান এটোম বলেন, মোফাজ্জল স্যারের মাল্টা চাষ দেখে আমি সহ গ্রামের অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী। কিন্তু কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষে কোন পরামর্শ পাওয়া যায় না। পরামর্শ পেলে আগামী বছরে আমি দুই একর জমি বর্গা নিয়ে মাল্টা চাষ করতাম। একই কথা জানালের এলাকার একাধিক কৃষক ও যুবকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহনাজ পারভিন বলেন, উচু সমতল ভূমির দোআঁশ মাটি মাল্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। প্রাকৃতিক সার, পোকামাকড় দমনে বিশেষ উপায়ে তৈরি বালাইনাশক ব্যবহার ও সঠিক পরিচর্যা করলে মাল্টার ফলন ভালো পাওয়া যায়। শুনেছি উপজেলায় বেশ কয়েকজন নিজ উদ্যোগে মাল্টা বাগান করেছেন। তারা ভালো সুফলও পেয়েছেন।

কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ছোট আকারে মাল্টা বাগান করতে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি লাগে। কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং এর প্রকল্প নিয়ে আসার চেষ্ঠা করা হবে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে