শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে চীনা মুরগীর ফার্ম গড়ার নজির স্থাপন চীনা-দম্পতির

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৩ জুলাই ২০২১, ২০:৪২

গাইবান্দা সদরের পলাশপাড়া এলাাকার বাসিন্দা মো. ফিরোজ আলম। ঢাকার জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় অনার্সের ছাত্র ফিরোজ আলম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার বিষয়ে কোর্স শেষে ২০১১ সালে স্কলারশীপ নিয়ে চীনে যান। সেখানে একটি সেমিনারে গিয়ে দেখা ও পরিচয় হয় সেখানকার এক কলেজ’র ফাইন আর্টসের শিক্ষক ও চীনা নাগরিক ওয়াং লু ফিং (সুফি)’র সঙ্গে। পরে তাদের মধ্যে প্রেম-পরিণয় হয় এবং ২০১১ সালেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা দুই-দেশে আমদানী রপ্তানীর ব্যবসাও শুরু করেন।

ফিরোজ আলম জানান, বিভিন্ন সময় নিজেদের আসা-যাওয়ার ফাঁকে চীন থেকে বেশ কিছু ডিম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তারা। পরে সারা বিশে^ করোনাকালীন সময়ে তাদের কিছু সময় অবসর মেলে। এর এক ফাঁকেই তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। চীনা নাগরিক সুফি শখের বশে গাজীপুরের কালীগঞ্জের নগরভেলা গ্রামে ১২শতাংশ ভাড়া করা জমিতে গড়ে তুলেন মুরগীর শেড। চীন থেকে আনা ওইসব ডিম কৃত্রিমভাবে ফুঁটে ১৩জাতের ৮৪টি বাচ্চার জন্ম হয়। ওই বাচ্চাগুলো নিয়ে তারা এসএস রেয়ার ব্রীড এগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এক বছরেই তাদের খামারের বিভিন্ন জাতের চীনা মুরগীর সংখ্যা বেড়ে এখন সাড়ে তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। এখন চীনা জাতের এসব মুরগীকে ঘিরে আমাদের দেশে বাণিজ্যকরণের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।

এই এগ্রো ফার্মে সাদা বর্ণের চাইনিজ সিল্কি, সাদা-কালো বর্ণের লু হেই চী (চাইনিজ দেশী), কালো রংয়ের কাদাকনাথ ও লালচে বর্ণের হুং ইয়াও জি তাদের খামারে লালন পালন হচ্ছে। এখান থেকেই সারা দেশেই চাইনিজ মুরগীর এসব জাত ছড়িয়ে দিতে চান এই দম্পতি।

চাইনিজ সিল্কি মুরগী ছয় মাসে দেড়/দুই কেজি ওজন হয়। ২১০টি করে একটানা ডিম দেয়ার পর একমাস বিরতি দিয়ে আবার ডিম দেয়া শুরু করে। ডিম আমাদের দেশি মুরগীর চেয়ে একটু বড়।

লু হেই চি জাতের মুরগী চার/পাঁচ মাসে আড়াই কেজির মতো ওজন হয় এবং ডিম দেয়া শুরু করে। তারা টানা ৩৫০টির মতো ডিম দেয় এবং প্রায় এক মাসের মতো বিরতি দিয়ে আবার ডিম দেয়া শুরু করে। ডিম আমাদের দেশী মুরগীর ডিমের মতোই আকারে হয়।

কাদাকনাথের পালক, মাংস ও হাড় কালো রংয়ের হলেও ডিম হাসের ডিমের মতো কিছুটা সবুজাভ, চার মাসে দুই কেজির মতো ওজন হয় এবং ডিম দেয়া শুরু করে। এ জাত টানা দেড়শ’র মতো ডিম দেয়।

হুং ইয়াও জি জাতের মুরগী ৫মাসে ৫ কেজির মতো ওজন হয় এবং ডিম দিতে শুরু করে। এরা একটানা সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’র মতো ডিম দেয়। মাস খানেক বিরতি দিয়ে আবার ডিম দেয়া শুরু করে।

এই খামারের উদ্যোক্তা চীনা নাগরিক সুফি বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভাবে পালন হওয়া বিভিন্ন জাতের মুরগীর মাংসের স্বাদ ও দেশীয় মুরগী পালনের বিবেচনায় তিনি এর চেয়েও উন্নত মুরগী বাংলাদেশে পালনের লক্ষ্যে এই খামারটি শুরু করেন। উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এসব মুরগীগুলোর যথাযথ মানানসই হয়েছে। এরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠছে, তেমনি দ্রুত প্রজননের উপযোগী হয়েছে। এভাবেই বেড়েছে তার খামারের মুরগীর সংখ্যা। তার খামারে থাকা চীনা সিল্কি ও প্রকৃত কাদাকনাথ মুরগী গাজীপুরে প্রথম।

তিনি আরো বলেন, চীনে বহু প্রজাতির মুরগী রয়েছে। কিছু রয়েছে দেখতে অনেকটা পাখির মতো। এসব জাতের মুরগীসহ বেশ কিছু উন্নত জাতের মুরগী তিনি বাংলাদেশের প্রকৃতিতে আনতে চান। যা পালন করে অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হবে। দেশে বাণিজ্যিক ভাবে পালন করে অনেকেই লাভবান হতে পারে।

ফিরোজ আলম জানান, তার স্ত্রী চীনা নাগরিক সুফি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাদের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে চীনাতে লেখাপড়া করছে। তিনি, স্ত্রী ও দুই ছেলে বর্তমানে বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। শখের বশেই তার স্ত্রী এই খামারটি গড়ে তুলেন। দেশীয় প্রাণী সম্পদের উন্নয়নে তার স্ত্রীর এই উদ্যোগ এখানে নতুন করে উদ্যোক্তা তৈরীতে ভূমিকা রাখছে। তাদের খামারের খবর পেয়ে প্রতিদিন অনেকেই দেখতে আসেন। এলাকার অনেক নারীরাই তার স্ত্রীর কাছে এসব মুরগী পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তারা তাদের বিভিন্ন ভাবে মুরগী পালনের কলাকৈাশল সম্পর্কে অবহিত করেন। চীনা মুরগীর চাষ সম্প্রসারণেও তারা নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চীনা জাতের এসব মুরগী সহজেই মানানসই। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বা অধিক ঠান্ডায় এসব মুরগী সহজেই টিকে থাকতে পারে, তাদের মৃত্যুহারও কম। ওইসব মুরগীর সঙ্গে বাংলাদেশের মুরগীর সংকরায়ন (ক্রস) করে তারা আরো উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চীনা মুরগীর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যেহেতু শখের বশে এই খামার গড়েছেন সেহেতু কর্মচারীদের পাশাপাশি নিজেরাই এর দেখাশোনা করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, যুবকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১০/১২হাজার টাকা বেতনে চাকুরীর জন্য না ঘুরে তারা চীনা মুরগির এ ফার্মটি করে দেখতে পারেন। এতে মাসে ৪০/৫০হাজার টাকা আয় করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় পরামর্শ, তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।

গাজীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এসএম অকিল উদ্দিন বলেন, আমাদের আবহাওয়া চীনা জাতের মুরগী পালনের উপযুক্ত। ব্যক্তি উদ্যোগে দেশে চীনা জাতে মুরগী পালনের এ ধরণের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার। আমরা খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই এই খামারটি পরিদর্শন করেছি। বিদেশী মুরগী পালন সম্প্রসারিত হলে এর একটা বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে