শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

​মাদারীপুরে কোরবানীর পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ী ও খামারীরা

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর
  ০৮ জুলাই ২০২১, ২০:৩৯

কোরবানীকে সামনে রেখে মাদারীপুরের খামারীরা গরু মোটা তাজা করণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যান্য বছর ঈদের ২/৩ সপ্তাহ আগ থেকে হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়। এ বছর করোনার কারনে হাট বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে ব্যবসায়ী ও খামারীরা। গৃহস্থরাও পশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে। খামারেও উল্লেখযোগ্য কোন ক্রেতা না আসায় খামারের শ্রমিকরাও তাদের বেতন পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কায়। বেশি লাভের আশায় গৃহস্থ ও খামারীরা কোন কেমিক্যাল ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজা করায় খরচ পড়েছে বেশি। করোনার কারনে গরুর হাট বন্ধ থাকায় অনলাইন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমেও বেচা কেনায় তেমন সাড়া পাচ্ছেননা গৃহস্থ ও খামারীরা।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলায় এ বছর ছোট বড় মিলিয়ে কোরবানীর জন্য হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারের সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ৯৮টি। আর ডেইরিসহ মোট খামারের সংখ্যা ১৬ হাজার। কোরবানীর জন্য চাহিদার চেয়েও বেশি পশু রয়েছে জেলায়। বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে মাদারীপুরের সকল পশুর হাট। অন্যান্য বছর ২/৩ সপ্তাহ আগ থেকেই কোরবানীর পশুর হাট মিলতে শুরু করে। এ বছর কঠোর বিধিনিষেধের কারনে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পশুর হাট না মেলায় এবং খামারে ও গৃহস্থদের গরু কিনতে না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে খামারী ও গৃহস্থরা। এ বছর খামারীদের এবং গৃহস্থদের গরু কেনাবেচা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। অনলাইনে গরু কেনাবেচা তেমন সাড়া পড়ছেনা। নামিদামি কিছু গরু দেখতে আসে উৎসুক জনতা। বেচাকেনা তেমন হচ্ছেনা। গৃহস্থরা তাদের উৎপাদিত পশু বিক্রি নিয়েও চরম উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাস ও গত বছরের আকস্মিক বন্যায় খামারী ও গৃহস্থদের যে ক্ষতি হয়েছে অনেকেই তা পুশিয়ে উঠতে পারেনি। খামারের গরু বিক্রি করতে না পারলে শ্রমিকদের বেতন পরিষদ ও গৃহস্থদের চরম লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের দাশেরচর গ্রামের আদর্শ খামারী সানজিদা ইসলাম জানান, করোনার কারনে কোরবানীর হাট না মেলায় খামারের গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে গরু বিক্রিতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। আর গ্রামাঞ্চলে অনলাইনে কেনাবেচা অনেক মানুষ ভালোভাবে বুঝেনা।

চরনাচনা গ্রামের আরেক খামারী কামাল মোড়ল জানান, দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করে আসছি। করোনার কারনে গরুর হাট না বসায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

জেলার রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের আদর্শ পশু পালন কেন্দ্রের মালিক মাস্টার আব্দুর রশিদ জানান, খামারে কোরবানীর যোগ্য গরু রয়েছে ৮৩টি। খামারের পিছনে দৈনিক খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। খামারে ৬ থেকে ৮ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। গত বছরের বন্যা ও করোনায় তার খামারের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কোরবানীর ঈদে তার খামারের গরু বিক্রি করতে না পারলে শ্রমিকদের বেতন দিতেই হিমসিম খেতে হবে বলে তিনি জানান।

মাদারীপুর জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এ.কে.এম আনোয়ারুল হক জানান, মাদারীপুর জেলায় কোরবানীর যোগ্য গরুর চাহিদা রয়েছে ৩৪ হাজার ১২৫টি। আমোদের উৎপাদন আছে ৩৬ হাজার ২২৩টি। আমাদের খামারী পর্যায়ে মোটাতাজাকরণ করছে ৮হাজার ২৬০টি এবং পারিবারিক পর্যায়ে ২৭ হাজার ৯৭৫টি। ৬টি অনলাইন প্লাট ফর্মের মাধ্যমে খামারীদের গরু বেচাকেনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে আগামী ১৪ তারিখের পর সীমিত আকারে গরুর হাট বসানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এদিকে কোরবানীর গরু মোটাতাজাকরণে যাতে অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে এ জন্য ২৪টি ভেটেরিনারী মেডিকেল টিম কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, মাদারীপুরে করোনা ভাইরাস ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। এ জন্য পশুর হাট বন্ধ রাখা হয়েছে। কোরবানীর পশু বিক্রির জন্য অনলাইনে প্লাটফম তৈরী করা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সকলে অনলাইনের মাধ্যমে পশু ক্রয়-বিক্রয় করবে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে