​সার-সংকট চরম, দিশেহারা কৃষক

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২১, ১৯:৩৯

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা

 

চলছে আমন ধানের চারা রোপনের মৌসুম। এ সময়টাতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমনের চারা রোপনের শুরুতে সার ব্যবহার করলেও হঠাৎ করে দেখা দিয়েছে সারের সংকট। ডিলার ও বিক্রেতাদের দোকানে ঘুরেও পাচ্ছেন না সার। কিছু কৃষক সার পেলেও সরকারি-নির্ধারিত দামের চেয়ে গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দাম। সঠিক সময়ে আমনের আবাদে সার প্রয়োগ করতে না পারলে প্রত্যাশিত উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

 

কৃষকদের অভিযোগ, বেশি মুনাফা লাভের আশায় ডিলার সিন্ডিকেটের সাথে খুচরা বিক্রেতাদের যোগসাজশে কৃত্রিমভাবে সারের সংকট তৈরি করা হয়েছে। ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট টিএসপি, ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়ায় ফসফেট), এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। ডিলার ও সার ব্যবসায়ীদের কাছে সার কিনতে গেলে তারা সার দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, সার পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দাম বেশি দিতে চাইলে সার বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এতে রসিদ দেওয়া হয় না। যাদের রসিদ দেওয়া হচ্ছে তাদের সরকারি দামের রসিদ ধরিয়ে দিয়ে গোপন রাখতে বলে দিচ্ছেন।

 

তবে তেঁতুলিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে এ  উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ১৩ হাজার  হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হচ্ছে। তারা বলছেন, ধানের আবাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি বস্তা টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ১শ টাকা সরকার নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩শ টাকায়, ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ৮০০ ও এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর বাধ্য হয়ে কৃষকদের সার কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। অন্যদিকে জমাটবাঁধা ও নষ্ট সার নতুন বস্তায় প্যাকেট করে ডিলার ও সাধারণ সার ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

 

সরকারি বিধি অনুসারে প্রত্যেক ইউনিয়নের স্থানীয় ব্যক্তিদের সারের ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও এ উপজেলার চিত্র আলাদা। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের স্থায়ী ব্যক্তিদের ডিলার নিয়োগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে অন্য উপজেলার ব্যক্তিদের ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা যায়। কৃষি সম্প্রসারন কার্যালয়ের তথ্যমতে, তেঁতুলিয়া উপজেলায় মোট ২৯ জন ডিলার রয়েছে। তাদের মধ্যে বিএডিসির ২২ জন এবং বিসিআইসির ০৭ জন ডিলার। এদের মধ্যে বিসিআইসির ডিলারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও পঞ্চগড় ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখের নিকট আত্মীয়। 

 

এছাড়া ডিলাররা তাদের স্ব স্ব দোকানে অল্প কিছু সার প্রদর্শনীর জন্য রাখলেও বেশির ভাগ ডিলার তাদের গুদাম থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সার ব্যবসায়ীদের কাছে গোপনে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের।

 

এ বিষয়ে সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন জানান, তিনদিন ধরে ঘুরে সার পাইনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরেও সার না পেয়ে হতাশা নিয়েই ফিরে যাই। তিনি জানান, বেশি দামে সার কিনলে পাওয়া যায় আর সরকারি নির্ধারিত দামে সার কিনলে ডিলার ও ব্যবসায়ীরা বলেন সার নাই। এ কারণে আমি আমন রোপনে ও চা বাগানে সার দিতে পারছি না।

 

একই কথা বলেন সরদারপাড়া ও আজিজনগর গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা বলেন, আমরা আমন ধানের চারা ও চা বাগান করেছি। কিন্তু সার দিতে পারিনি। যারা  প্রভাবশালী, তারা সার পেয়ে যান। আর আমরাতো সাধারণ কৃষক কয়েক দিন ঘুরেও সার পাই না। দোকানে গেলেই বলে সার নাই। আবার বেশি দাম দিলে বলে সার আছে। আমরা কৃষকরা আজ অসহায় হয়ে গেছি। কেউই বিষয়টি দেখছে না।

 

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও পঞ্চগড় ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পঞ্চগড়ে সারের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন করে সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত দামে কোথাও সার বিক্রি হচ্ছে না।

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সারের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে সারের বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিনই তেঁতুলিয়ায় সার আসছে। সার পৌছতে একটু দেরি হওয়ায় কৃষকরা হতাশা দেখাচ্ছেন। আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে কৃষকের এই হতাশাটুকু থাকবে না। তিনি আরও বলেন, সারের সংকট যেন না হয়, তার জন্য আমরা তদারক করছি। যারা সারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন, প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

যাযাদি/ এস