খানসামায় পাটের আবাদ ও চাহিদা বেশি, ভালো দামে কৃষক খুশি

প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩৮

মো. নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পাটের আমদানি ভালো। চাহিদাও বেশি। পাটের দাম পেয়ে আনন্দ কৃষকের মনেও। পাকেরহাট হচ্ছে দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় পাটের বাজার। এই হাটের রাস্তার উভয় পাশে সারি সারি দাঁড়ানো পাট বোঝাই ভ্যানগাড়ি। ভ্যান থেকে লোড হচ্ছে ট্রাক্টরে। কেউ ডিজিটাল পাল্লায় মাপছেন, আবার পাট নিয়ে বাজারে আসা মাত্রই ঠিক হচ্ছে দাম। ওই ভ্যানেই ফিরে যাচ্ছে পাট। আনলোড হচ্ছে ব্যবসায়ীর গুদাম ঘরে। এ যেন নিস্তব্ধ পাটের বাজারে নীরব বিকিকিনি।

 

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পাকেরহাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, মিল মালিক প্রতিনিধিসহ ক্রেতাদেরও উপচে পড়া ভিড়। পাট নিয়ে বাজারে থিতু হতে না হতেই চড়া দামে পাট কিনে গুদাম ঘরে নিচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি বেশি হলেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না মিল মালিক প্রতিনিধিরা। সংশ্লিষ্ট সকলেই বলছেন, গত বছর মৌসুমের শেষে ভালো দাম পাওয়ায় এবার শুরুতেই পাট কিনে মজুদ করতে মরিয়া মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ মিল মালিক ও ফড়িয়ারা। এই হাটে ৪২ কেজিতে মণ ধরা হচ্ছে পাটের। অর্থাৎ কৃষক ৪২ কেজি পাট মেপে দিলে ক্রেতার কাছে সেটার ওজন ধরা হচ্ছে ৪০ কেজি। প্রতি মণ তোষা পাট বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ টাকা থেকে ৩৩০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দেশি পাট বিক্রি হচ্ছে ২১০০ থেকে ২৪০০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহেও এই বাজারে প্রতি মণ তোষা পাট বিক্রি হয়েছে ২৩০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাটের দামের এই ঊর্ধ্বগতি।

 

ছাতিয়ানগড় গ্রাম থেকে পাট বিক্রি করতে এসেছেন মজিবর রহমান। তিনি জানান, এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছেন। চাষ, সার-বীজ ও নিড়ানি বাবদ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। সেখানে ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১৫ মণ পাট। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪৬ হাজার টাকা।

 

বাজারে পাট কিনতে আসা পপুলার জুট প্রসেস লিমিটেডের প্রতিনিধি ইমরান আলী জানান, গত ১০ বছরেরও অধিক সময় প্রতি মৌসুমে এখানে পাট কেনেন তিনি। কোনো বারেই মৌসুমের শুরুতে পাটের দামের এমন ঊর্ধ্বগতি দেখেননি। তিনি বলেন, গত বছর মৌসুমের শেষে প্রতি মণ পাটের দর গেছে ৬ হাজার টাকারও বেশি। এবারো অধিক লাভের আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ অনেকেই পাট কিনে মজুদ করছেন। আমরা মিল মালিক প্রতিনিধিরা কৃষকের কাছে ভেড়ার আগেই পাট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

 

এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে পাটের আবাদ কমলেও এবারই পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বেশি হয়েছে। এবার ১২০০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। সেখানে ১৩২০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে।

 

এ বিষয়ে উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বলেন, এ বছর উপজেলায় ২৬০০ কৃষককে পাটের বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও পাটের বীজ উৎপাদন ও পাটের চাষাবাদ বিষয়ে ২০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। পাটগাছের বাড়ন্তকালীন বৃষ্টিপাত কম হওয়াসহ অনুকূল আবহাওয়ার ফলে এবার পাটের ফলনও হয়েছে ভালো।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, পাটের আবাদ থেকে মানুষ বিমুখ হয়ে যাচ্ছিল। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষকদের সচেতনতা সর্বোপরি গেল বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা পাটের আবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আগামীতে পাটের আবাদ আরও বেশি হবে বলে তিনি আশা করেন।

 

যাযাদি/এস