তেঁতুলিয়ায় সজি কচু চাষে লাভবান কৃষক

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২১, ১৯:৪৭

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা

 

সজি উৎপাদনের চাহিদায় তেঁতুলিয়ায় বেড়েছে কচুর আবাদ। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়া চা শিল্পের জন্য খ্যাত হলেও সবজি চাষের জন্যও সুপরিচিত। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভাগীয় শহরে রপ্তানি হচ্ছে। সবজির চাষের মধ্যে সজি কচু অন্যতম। তরকারিতে সজির কদর অনেক। সজি চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন প্রান্তিক চাষিরা।

 

সবজির চাহিদা মেটাতে গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলে বেড়েছে সজি কচুর চাষ। সজি কচু চাষে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকা ও পোকা, রোগ বালাই ও সার-কীটনাশকের খরচ না থাকায় সে কারণেই স্থানীয় কৃষক সজি কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

 

সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেই সজি কচু চাষ হচ্ছে। সজি চাষে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে অনেক কৃষকের। স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। এমনই এক স্বাবলম্বী কৃষক উপজেলার খয়খাটপাড়া গ্রামের হামিদুল হক। এলাকায় তিনি আদর্শ সজি কচু চাষি নামে পরিচিত।

 

হামিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি সজি কচু চাষ করে আসছেন। অন্যান্য চাষের চেয়ে সজি চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় সজি চাষে মনোযোগ দেন। তিন কাঠা জমি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন সজি চাষ।  এবার ৮ কাঠা জমিতে সজি চাষ করেছেন। স্থানীয় তিরনইহাট, রনচন্ডি, শালবাহান বাজার, চৌরাস্তা বাজারে সজির চাহিদা ভালো থাকায় বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন।

 

হামিদুল জানান, প্রতি বছর এই জমিতে দেশি সজি লাগাতাম। এবারে বগুড়ার সজি লাগিয়ে দেখলাম বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ২০ শতক জমিতে সজি চাষের জন্য মাত্র ইউরিয়া ৬ কেজি, পটাশ ৬ কেজি, বেটনো সিয়াম ৬ কেজি, ফুরাডন ৫শ গ্রাম দিলে পোকামাকড় ধরে না। সজি চাষ করে সংসার চলছে। কলেজ পড়ুয়া ছেলেও এই  সজি চাষে সহযোগিতা করছে। বর্ষার পানি জমে না থাকলে এই মাসে ৩৬-৪০ হাজার টাকা বেচাকেনা করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

 

সদর ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের চাষি রিপন জানান, ২৫ শতক জমিতে সজি লাগিয়েছেন। চার-পাঁচ দিন ধরে বাজারে বেচা শুরু করেছেন। প্রতিদিন ৬০-৭০ কেজি সজি বিক্রি করেন। প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করে বেশ ভালো দাম পাচ্ছেন। খরচ না থাকায় লাভবান হবেন।

 

একই গ্রামের সুজন জানান, তেঁতুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি সজি চাষ হচ্ছে বুড়িমুটকি, সরকারপাড়া, রনচন্ডী, খয়খাটপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায়। মাত্র ১০ শতক জমিতে সজি চাষ করে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করেছেন।

 

উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কচু চাষে লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় চাষিরা। চাষিরা জানান, চৈত্র মাসের শুরুতেই আগাছা পরিষ্কার করে মাটি কুপিয়ে চাষ যোগ্য করে তোলা হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম বৃষ্টি হলেই মাটিতে সজি কচুর বীজ বপন করা হয়। চারা গজানোর পরে আগাছা পরিষ্কার, কেল বা লাইন করা (দু’পাশ থেকে মাটি গাছের গোড়াতে দেওয়া) ও প্রয়োজনমতো কয়েকবার সার প্রয়োগ করতে হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে সজি কচু জমি থেকে উত্তোলন ও বিক্রি শুরু হয়।

 

তেঁতুলিয়া  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো জাহাঙ্গীর আলম জানান, অন্যান্য জায়গায় বর্ষার পানিতে ডুবে গেলেও উত্তরে তেমন পানিতে ডুবে না। এসব আবাদ খাল জমির চেয়ে ডাঙ্গা জমিতে বেশি ভালো হয়। সজি কচু আবাদে তেমন খরচ হয় না। অল্প পুঁজিতে এ চাষে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। এখানে সজি কচু চাষ ভালো হচ্ছে। বাজারেও ভালো দাম। কৃষকরা লাভবান হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। উপসহকারী কৃষি অফিসাররা কচু চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।  যেকোনো  পরামর্শের জন্য  সর্বদা কৃষি বিভাগ তাদের পাশে আছে।

 

যাযাদি/এস