​সিরাজগঞ্জে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষীরা

প্রকাশ | ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:১৪

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ

 

 

সিরাজগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। সরিষার অপরূপ আর গন্ধে মাতোয়ারা চারিদিক। এসব সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষীরা ।

 

সিরাজগঞ্জ জেলার সদর,কাজিপুর, বেলকুচি, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, তাড়াশ , রায়গঞ্জ, ও চৌহালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ক্ষেতের পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌচাষীরা।   এই মৌসুমে মৌমাছিরা সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে মধু তুলে নেয়, আর সেই মধু সংগ্রহ করতেই যেন মৌখামারী  উৎসবে মেতেছেন। এতে একদিকে যেমন সরিষা ফুলের পরাগায়ন হচ্ছে অন্যদিকে সরিষার উৎপাদনও  বাড়ছে। অপর দিকে এই ফুল থেকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষা চাষি ও মৌ চাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

 

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় এ বছর সিরাজগঞ্জের ৯টি জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৯হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩.৯৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ সকল সরিষার ক্ষেত থেকে গত বছর ২১০ মেট্রিক টন মধু আহরণ হয়েছিলো । এ বছরে ইতিমধ্যেই ৬০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বারের তুলনায় এবার আরও বেশি মধু আহরণ সম্ভব হবে বলে জানায় সিরাজগঞ্জ কৃষি বিভাগ। চলনবিল এলাকায় মধু সংগ্রহে সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌ-চাষি নজরুল ইসলাম জানান, আমরা প্রতি বছরই চলনবিল এলাকায় সরিষা মৌসুমে মধু সংগ্রহের জন্য আসি।

 

আর এ বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় গত বছরের চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ করা যাবে বলে আশা করছি। যশোরের মৌ-চাষি আব্দুল মজিদ বলেন, চলনবিল এলাকায় চারদিকে সরিষার ফুলে ছেঁয়ে গেছে। এখনই উপযুক্ত সময় মধু সংগ্রহের। তাই ৫০০ মৌ-বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে মৌ-বাক্স খুলে দেয়া হয়। মৌমাছির দল সারাদিন মধু নিয়ে বিকালে বাক্সে ফেরে । উত্তরবঙ্গের মৌচাষী সমিতির সহ-সভাপতি খামারী আব্দুর রশিদ বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলা মোট মৌখামারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ শত। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৩ হাজার মানুষের। এবার আবহাওয়া ভালো থাকলে গত বছরের তুলনায় এবার মধু সংগ্রহের পরিমান বেড়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

 

উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সূর্বনা ইয়াসমিন সুমি জানান,  চলতি রবি মৌসুমে চলনবিল অধ্যুষিত উল্লাপাড়া উপজেলার সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ৪৬১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে নতুন জাতের সরিষার আবাদ করা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর উপজেলার ১১২ জন খামারীর নিকট থেকে প্রায় ১৫৬ টন মধু সংগ্রহ করা হয়েছিলো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার এই লক্ষ্যমাত্রা তার চেয়েও বেশী মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। সরিষায় মৌমাছি থাকলে পরাগায়নটা ভালো হয়। ফলে ফলনটাও বেশি হয় বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা । তাড়াশ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লুনা জানান, গত বছর তাড়াশ উপজেলায় ২২ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়েছিলো।

 

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ৩২ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি। সিরাজগঞ্জে সরকারিভাবে মধু প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুরে মধু প্রসেসিং প্ল্যান্টটির স্থাপনে অবকাঠামো নির্মাণ চলমান রয়েছে বলে জানান উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ান মওদুদ আহমেদ । এতে মধু আহরণকারীরাও লাভবান হবে বলে তিনি জানান।

 

এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আবু হানিফ জানান, বলেন, এ সকল সরিষার ক্ষেত থেকে গত বছর মধু আহরণ হয়েছিলো ২১০ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি মধু আহরণ সম্ভব হবে।

 

যাযাদি/ এস