​গাংনীর বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাহিদা বাড়ছে বিশ্ববাজারে

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ২০:০৯

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী

 

মেহেরপুরের গাংনীর কৃষকদের উৎপাদিত বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাহিদা বাড়ছে বিশ্ববাজারে। কৃষকদের উৎপাদিত বাঁধাকপি ও ফুলকপি সুস্বাদু ও বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি। মেহেরপুরের বাঁধাকপি এখন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে যাচ্ছে। এই রপ্তানিতে সবজি চাষের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ। দেশে ছেড়ে ভিন্ন দেশে চাহিদা করায় এবং আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

 

মেহেরপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, নিরাপদ সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা। এখানে সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ হয়। উপজেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে কীটনাশক সহনশীল ও নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি চাষ করছেন।  গত বছরে ৫০০ মেট্রিক টন রপ্তানি হয়েছিল এশিয়া মহাদেশের তিনটি দেশে। চলতি মৌসুমে  চারটি দেশ ১৫০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপি নেওয়ার চাহিদা দিয়েছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। সে মোতাবেক সরবরাহ করা হবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে। কৃষকদের কাছ থেকে কপিগুলো সংগ্রহ করছেন রপ্তানিকারকরা। ক্ষেত থেকে সাদা কাগজে মুড়িয়ে বস্তা ভর্তি করে রপ্তানি উপযোগী করা হচ্ছে বাঁধাকপি।

 

রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে বাঁধাকপি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুক্তিবদ্ধ কয়েকজন কৃষক। রপ্তানিকারকরা কৃষকের জমি থেকেই নিরাপদ বাঁধাকপি সংগ্রহ করেছেন।

 

নাজ এন্টারপ্রাইজ ও এগ্রো ফ্রেশসহ কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের  জমি থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ শুরু করেছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন মাঠ থেকে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপি সংগ্রহ করছেন।

 

গাংনীর কোদাইলকাটি গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, রপ্তানিকারক  প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায় বাঁধাকপি ক্ষেত থেকে সংগ্রহের আগেই নিরাপদ সবজির প্রক্রিয়া করা হয়। কপি কাটার পর সাদা কাগজে জড়িয়ে নেট বস্তায় ভর্তি করা হচ্ছে। প্রতি বছরেই শীতকালের সবজি চাষে আমাদের লোকসান হয়। প্রতিবছর এভাবে সবজি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমরা অতি আনন্দে সবজি চাষ বৃদ্ধি করতে পারব। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন সবজি গ্রামখ্যাত সাহারবাটির নিরাপদ সবজি চাষি তৈয়ব আলী, তবারক হোসেন, বেল্টু মিয়াসহ অনেকেই। নিজের দেশের উৎপাদিত সবজি বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান বেড়েছে বলে জানান শ্রমিক সর্দার মো. জনি।

 

এগ্রো ফ্রেশ নামের রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার রুবেল আহমেদ বলেন, এ বছর চুক্তিবদ্ধ ৪৫ জন কৃষকের ৭৫ একর জমি থেকে নিরাপদ উপায়ে চাষ করা হয়েছে বাঁধাকপি। জমিতে চারা রোপণের পর থেকে কপি সংগ্রহ করা পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানি উপযোগী করা হয়। এ বছর রপ্তানিতে বেশ চাহিদা আছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হয়েছিল। এ বছর নতুন দেশ হিসেবে তাইওয়ান ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হচ্ছে।

 

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রথমদিকে আমাদের জেলায় উৎপাদিত বাঁধাকপির মূল্য থাকলেও শেষের দিকে এসে কৃষকরা একেবারেই মূল্য পান না। অনেক সময় পরিবহণ খরচ হয় না। এ সময় অন্য দেশে রপ্তানি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে অন্যান্য দেশে এর বাজার তৈরি করলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।

 

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এ বছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে দিন দিন  বেড়েই চলেছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা। কোনোভাবেই যেন এ সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের বাজারের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত সবজি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে জেলার সবজির চাহিদা বাড়াতে চাষিদের নানা ভাবে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।

 

যাযাদি/এস