হাকালুকি হাওর তীরে কৃষকের ব্যস্ততা

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৫৩

আবদুল আহাদ, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর তীরের কৃষি জমিতে চলছে বোরো ফসলের চারা রোপন। শীতের সকাল থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে হাল-চাষ, জমির বাঁধ (আইল) নির্মাণ, পানি সেঁচ, চারা রোপন ও বেড়া দেওয়ার কাজ। আগাম জমি প্রস্তুত করে কে কার আগে ধানের চারা রোপন করবেন এমন প্রতিযোগীতা চলছে কৃষকদের মাঝে। কেউবা জমিতে সার-গোবর দিচ্ছেন, কেউ শ্রমিকদের তদারকি করছেন, কেউবা চারা রোপন করছেন আবার কেউ কেউ আগাছা বাছাই করে জমির কোনে একেক স্তুপ করে রাখছেন। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন হাওরাঞ্চলের সর্বত্র।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর। এরমধ্যে হাইব্রীড ১ হাজার হেক্টর, উফসী ৭ হাজার ১৮০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ২০ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ২৮৮ হেক্টর বেশি। এ পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭০ ভাগ আবাদ হয়েছে। তবে এখনও যেটুকু সময় বাকি আছে তাতে আশা করছি, এবারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে। এবার কুলাউড়া উপজেলা থেকে শুধু বোরো ধান প্রায় ৪৮৫৮৫.০০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। যা গত বছরের তুলনায় ১৬৪৭.০০মেট্রিকটন বেশি। এছাড়াও এবার বোরো ধানের আবাদ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার প্রায় ৪ হাজার বোরো চাষীকে বিনামূল্যে হাইব্রীড বীজসহ নানা ধরনের উপকরণ সহায়তা করা হয়েছে। 

 

হাকালুকি তীরের জয়চন্ডী ইউপির জকিরবিল ও ধলিয়ার হাওরের জমিতে বোরো চারা রোপন করছেন নিয়াজ আহমদ (৪৫), নুরুল ইসলাম মনা (৪২), আতাই মিয়া (৫০), রফিক মিয়া (৫০), শাহিন আহমদ (৩৫), রুবেল মিয়া (৪৫)সহ অনেকে। আলাপকালে তাঁরা জানান, সময় মতো পানি সেচ দিতে না পারায় গত বছর ফসলে অনেক ঘাটতি হয়েছে। এজন্য এবার আগাম জমি প্রস্তুত করে রোপন করছি, যাতে আগে আগে পানি সেচ দিতে পারি। স্থানীয় গোগালি ছড়া প্রশস্ত করায় এখন আর সহজে ছড়ায় বাঁধ দিয়ে বোরো জমিতে পানি উত্তোলন করা যায় না। ছড়ায় বাঁধ দিতে হলে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু গরীব কৃষকের পক্ষে এত টাকা ব্যয় করে বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়না। যারফলে কাঙ্কিত ফসল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা। তাঁদের দাবী, সরকারী সহায়তায় যদি গোগালী ছড়ার কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে দেওয়া হতো, তাহলে পানি সেচের ব্যয়টা তাঁদের কমতো। এরপরও অনেক স্বপ্ন নিয়ে চারা রোপন করছি। এবার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারীভাবে ধানের বীজ পেয়েছেন বলে তাঁরা সকলেই জানান।

 

হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, এই অঞ্চলের মানুষ একমাত্র বোরো ক্ষেতের উপর নির্ভরশীল। গত মৌসুমে আশানুরুপ ফসল পাননি কৃষকেরা। যার ফলে হাওর তীরের বেশ পরিবারের মাঝে তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। আগাম ধান তুলতে এবার কৃষকরাও আগে আগে রোপন শুরু করেছেন।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবদুল মোমিন জানান, গত ৫ বছরের চেয়ে এবার বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রা বেশি। বোরো চাষে যাতে কৃষকের আগ্রহ নষ্ট না হয়, সে জন্য সরকারিভাবে বীজসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

যাযাদি/ এস