শায়েস্তাগঞ্জে সেচের অভাবে কৃষকদের বোবা কান্না" সৈ
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:০০
শায়েস্তগঞ্জ উপজেলায় সেচের অভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে কৃষকদের স্বপ্ন। আসছে আগামী মৌসুমে বোরো ধান কিভাবে বপন করবেন এ নিয়ে কৃষকরা হতাশাগ্রস্ত। জানা যায়,
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ২০ জন কৃষক পেয়েছেন বিএডিসি থেকে সরকারি সেচের অনুমোদন, কিন্তু এতে অনেকটাই বঞ্চিত হয়েছেন উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই গ্রামের কৃষকরা।
নানান টালবাহানার কারণে নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই গ্রামের প্রকৃত কৃষকরা পাননি সেচের কোনরকম সুবিধা। ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে সুতাং অঞ্চলে ২০০০-২৫০০ গজের ভিতরে ও নেই কোন সেচ সুবিধা, ফলে ফসলি জমি তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ বোরো মৌসুমের ধান ফলানো বাদ দেয়ার চিন্তায় আছেন।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পার্শ্বে সুতাংয়ে নিজ উদ্যোগে সেচ বসিয়েছেন সুরাবই গ্রামের মীর রতন। তিনি গতবার ও এখানে কয়েকশ একর জমিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সেচ দিয়েছেন।
রতন মিয়া জানান, গতবার ও আমি লস দিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করে পানি দিয়ে সহযোগিতা করেছি, এবার ও শুরু করেছি, কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বেশি থাকায় আর সময় বেশি লাগায় আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন অফিসের মেম্বারদের দ্বারস্থ হলেও কি কারণে তাকে সেচ কমিটি অনুমোদন দেয়নি তিনি জানেন না। এ বিষয়ে সুরাবই গ্রামের কৃষক ফরহাদ মিয়া জানান, ভোটের সময় এলেই কেবল মেম্বার চেয়ারম্যানরা আমাদের কাছে আসেন, কিন্তু কখন সেচ কমিটির সভা হয়, মিটিং হয় তা আমাদের জানানো হয়না, নাহলে আমরা অবশ্যই সেচের সুবিধা নেয়ার জন্য আবেদন জমা দিতাম।
সুরাবই গ্রামের মীর শাহিন জানান, এমনিতেই বন্যশুকুর আমাদের ধান খেয়ে ফেলে, এবার যে কিভাবে ধান বোপন করব তা জানিনা। আমি সেচের সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সেচ কমিটির সুত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই ইউএনও কে সেচ কমিটির সভাপতি করে এবং বিএডিসি একজন ইঞ্জিনিয়ারকে সদস্য সচিব ঘোষণা করে সভা করা হয়েছে উক্ত সভার মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেচ কমিটির স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন জমা নেয়া হয়।বিএডিসি তদন্ত করে কৃষকদের সেচের অনুমোদন দিয়ে থাকে।
এছাড়াও
সরকারি সেচে রয়েছে অর্ধেক খরচে বিদ্যুৎ এর সুবিধা, রয়েছে গভীর গর্ত থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পানি তুলার সুবিধা যা কৃষকদের জন্য অনেক সহায়ক হয়ে থাকে।
সুতাং অঞ্চলের কৃষকরা সেসব সুবিধা না পাওয়ায় অতিরিক্ত পানি কিনে জমিতে দেয়া অনেক কৃষকেরই সম্ভব হচ্ছেনা, মরতে বসেছে তাদের নতুন ধান বোনার স্বপ্ন।
আবার, একদিকে বীজতলা তৈরি করলে ও সেচের কারণে তাদের বোবা কান্না যেন প্রাণ ছিড়ে খলিজায় গিয়ে দাগ লেগেছে, এ যেন দেখার কেউ নেই।
এমন বাস্তবতায়, ঘন কুয়াশার কারণে কৃষকদের বীজতলার ও ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, একদিকে পানি নেই, অন্যদিকে বীজতলা ও ভাল নেই, সবকিছু মিলিয়ে কৃষকরা গভীর চিন্তায় আছেন।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ বিএডিসির কর্মকর্তা মোঃ নাইম জানান, কে কে সেচের অনুমোদন পেয়েছেন তিনি জানেন না, এটা শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কাজ। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা, কোন এলাকা থেকে ২০ জন সেচের অনুমোদন পেয়েছেন সেটা ও আমার বোধগম্য নয়। ২০ জনের লিখিত তালিকা চাইলেও তার কাছে কোন তালিকা নেই বলে জানান এ প্রতিবেদককে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই তিনি সেচ কমিটির অনুমোদিত লোকজনকে সেচের সুবিধা দিয়েছেন, অথচ উনার কাছে কোন তালিকাই নেই।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিনহাজুল ইসলাম জানান, আমি একাধারে ৭৩ টি কমিটির সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি, আমি একা মানুষ কিছু সমন্বয়হীনতা হতে পারে৷ আমার জানামতে, ৮২০ গজ দূরত্ব এর বাহিরে একটা সেচ বসানো হয়, কিন্তু সুতাং অঞ্চল কেন বাদ পড়ল এটা আমি দেখব, আর সুতাং অঞ্চলের কৃষকরা সেচ সুবিধা পাননি সেটা আমার জানা ছিল না। তবে এখনো যদি অত্র অঞ্চলের কেউ সেচ সুবিধার জন্য আবেদন করেন আমি আরেকটি সভা করে উনাকে সেচ সুবিধা দিতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
তবে, গত একবছর আগেও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিএডিসি একই আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, কিন্তু কোন কাজের কাজ হয়নি। একই বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর জানান, সেচের বিষয়টি বিএডিসি দেখভাল করে এটা আমরা দেখিনা।
যাযাদি/এস