তেঁতুলিয়ার চরে তরমুজে সমৃদ্ধির হাতছানি

প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৩৪

এমএইচ শিপন, বোরহানউদ্দিন (ভোলা)

 

 

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা বিভন্ন চরে গত তিন বছরে রেকর্ড ভাঙ্গা তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষি অর্থনীতির নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে ফলে চাষিরা দেখছেন সমৃদ্ধির হাতছানি উৎপাদন ভালো হবার পাশাপাশি রমজানে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির আভা স্বল্প সময়ে(৮০-১২০ দিন) এতো লাভ আর কোন ফসলে হয়না তাই তরমুজ চাষে দিন দিন চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে মাটির গুণের কারণে ভোলার তরমুজ পুষ্টিগুণের পাশাপাশি আকারে বড় স্বাদও তুলনামূলক বেশী 

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গঙ্গাপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর চরে উপজেলার মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশের বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় গত বছর উপজেলায়  ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে  তা- প্রায় তিন গুণ ছাড়িয়ে  ৩৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে বছর ফসলের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬০ হেক্টর প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ মেট্রিক টন তবে কৃষকরা বলছেন  লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬০০ হেক্টরের বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে গত দশ বছরের মধ্যে এটা সর্বোচ্চ ফলন

 

ওজন হিসেবে এর পরিমান ২৪ হাজার মেট্রিক টন টাকার অংকে পাইকারি বিক্রয়মূল্য প্রায় কোটি টাকা

 

চাষিদের প্রশিক্ষণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, কৃষি অফিসের সর্বাত্বক তদারকি এবং ক্ষুদ্র চাষিরা প্রণোদনা পেলে তরমুচ চাষের পরিধি দিন দিন বাড়বে ফলে ভোলার কৃষি অর্থনীতি নুতুন মাত্রা পাবে বলে মনে করছেন তরমুজ চাষিরা

 

সরেজমিনে গঙ্গাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত তেঁতুলিয়া নদীর  বিচ্ছিন্ন চর শরীফাবাদ চরে গিয়ে দেখা যায় কয়েক শত শত একর জমিতে তরমুজ ক্ষেত ওই চরের তরমুজ ক্ষেতের চাষি মো. সুমন হাওলাদার জানান, তিনি ৩০ একর জমিতে প্রথমবারের মতো ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন একরপ্রতি খরচ হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা একর প্রতি বিক্রি নেমেছে লাখ ৪০ হাজার টাকা একই চরের পাশ্ববর্তী চরের চাষি  তাজল শাহাবুদ্দিন জানান, ৪০ একর জমিতে  ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন একরপ্রতি খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা একর প্রতি বিক্রি নেমেছে লাখ ৪৫ হাজার টাকা

 

শিকদার চরের বাচ্চু সর্দার জানান, একর জমিতে এবার ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন খরচ হয়েছে প্রায় লাখ টাকা সব মিলিয়ে বিক্রি লাখ টাকা হতে পারে

 

চর লতিফের চাষি লিটন মেম্বার বলেন, ১২ একর জমিতে ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছি ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বিক্রি নেমেছে ১৫ লাখ তিনি কম উৎপাদনের জন্য বীজে ভেজাল থাকাকে দায়ী করেন জাত ছাড়া চাষিরা কম-বেশী সুইট হানি, রেড ড্রাগন বারি- জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন

 

এছাড়া চর রায়শ্যাম,পাতার চর, কলাগাছিয়ায় তরমুজের প্রচুর আবাদ হয়

 

ওই সময় চাষিরা  ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষি অফিসের কোন লোক গত তিন বছরে তাঁদের এলাকায় আসেননি তাঁদের কাছে কোন পরামর্শতো দূরের কথা নিজেরা যোগাযোগ করেও কোন সাঁড়া পাওয়া যায়না তাঁরা আরো জানান, তরমুজ গাছে যখন ফুল আসে তখন তাঁদের মধুর বাসা সরবরাহ করলে প্রাকৃতিক পরাগায়নে ফলন যেমন ভালো হতো পাশাপাশি খরচও কম হতো এখন হাতে হাতে পুরুষ ফুল নিয়ে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন ঘটিয়ে নিষেক প্রক্রিয়া ঘটানো হয় এছাড়া সরকারী ভর্তূকি মূল্যে সেচ পাম্প, পাওয়ার ট্রিলার পেলে অনেক টাকা সাশ্রয় হয়

 

চাষিরা জানান, প্রথমে তরমুজ নৌপথে ট্রলার দিয়ে বরিশাল অংশে নেওয়া হয় তারপর কুমিল্লা, সিলেট, কুমারকান্দি, কাঠপট্টি, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পাইকারদের পৌঁছে দেওয়া হয়

 

স্থানীয় বাজারে তরমুজের দাম বেশি কেন- ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কৃষকরা জানান, ১০-১১ কেজি ওজনের একটি তরমুজ আমরা পাইকারি বিক্রি করি ১৭০ টাকা এর সাথে আড়ৎ পর্যন্ত পৌঁছতে খরচ আরো ১৫ টাকা খরচ আছে আড়তদার প্রতি পিচে ২০ টাকা লাভ করলে খুচরা বিক্রি সর্বোচ্চ ২৩০ টাকার বেশী হবার কথা নয় কিন্তু ওই তরমুজ বিক্রি করে ৩৫০-৪০০ টাকা এখন দেখা যায় আমাদের থেকে বেশি লাভ করে খুচরা বিক্রেতারা প্রশাসন যদি মৌসুমী ফল বিক্রির যায়গা করে দেন তাহলে ভোক্তারা অনেক কম মূল্যে ধরনের ফল পেতে পারেন

 

কৃষকদের পাশে না থাকার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গঙ্গাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, - মাস আগে তিনি ওই ব্লকের দায়িত্ব পেয়েছেন চরে তাঁর যাওয়া হয়নি তবে ভবিষ্যতে যাবেন

 

গঙ্গাপুরের জয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবিএম অজিউল্যাহ একই প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে পরে ফোন করবেন বলে জানান তবে তিনি রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আর ফোন করেননি

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা(অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ওমর ফারুক বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই উপ-সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে মধুর বাক্সের বিষয়ে তিনি জানান, রবি মৌসুমে সমগ্র উপজেলায় মাত্র দুই সেট মৌ-সেট পাওয়া গেছে চাহিদার বিষয়টি তিনি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে লিখবেন ট্রিলার,সেচ যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারিভাবে এখন আর ভর্তূকি মূল্যে সেচযন্ত্র দেয়া হয়না কোন প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো দিলে কৃষক উপকৃত হবেন  তবে কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিনের জন্য আবেদন করলে দেয়া যাবে তিনি আরো জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই মৌসুমে বাম্পার ফলন হবার পরও চাষিরা সমস্যায় ছিল এখন কৃষকরা নির্ভার কৃষি অফিস সব সময় কৃষকদের পাশে আছে

 

যাযাদি/এস