সখীপুরে এক হাজার টাকায়ও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক : বিপাকে কৃষক

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২২, ২০:১৮ | আপডেট: ০৮ মে ২০২২, ২০:১৯

সখীপুর(টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

 

 

রোববার সকালে শ্রমিক হাঁটে ধান কাটার শ্রমিকের সন্ধানে কচুয়া বাজারে আসেন সাড়াসিয়া গ্রামের কৃষক কুরবান আলী। একই উদ্দেশ্যে কালিয়ার জমির উদ্দিন, আড়াইপাড়ার কয়েকজন, বানিয়ারসিটের কয়েকজন কৃষক আসেন শ্রমিকের জন্য। সরেজমিন দেখা যায় শ্রমিকের সংখ্যা কৃষকের সংখ্যার চেয়ে খুবই অপ্রতুল। কেউ কেউ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ বেশি দামে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে।

 

 এ অবস্থা তৈরি হয়েছে টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় ইরি-বোরো ধান কাটা শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় বাম্পার ফলন হলেও একমণ ধানের দামে মিলছে না একজন ধানকাটা শ্রমিক। বর্তমানে একজন শ্রমিকের খাবারসহ মজুরি দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। সেই সঙ্গে পান-বিড়ি, সিগারেটতো থাকছেই । এতে জনপ্রতি  মজুরি পড়ছে প্রায় এগারো'শ টাকা। এদিকে বাজারে একমণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। ফলে একমণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে না পারায় মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

 

সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কৃষক আজমত আলী, আরিফ হোসেন, ফরমান আলীসহ বেশ কয়েজন কৃষক জানান, বোরো চাষে জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, সেচ, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, ধানকাটা শ্রমিক খরচসহ প্রতিমণ ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা। আবার এখন ধানকাটা শ্রমিক সংকটের কারণে উচ্চ মজুরি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

 

কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা থাকলেও শ্রমিক সংকটের কারণে মাঠের পাকাধান কেটে উঠাতে পারছেন না কৃষকর।

 

কচুয়া গ্রামের ফজল মিয়া বলেন, ৩ একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে রয়েছে। শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছি না।’ আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। ফলে চড়া মূল্যে শ্রমিক নিয়ে ধানকাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

 

শ্রমিক সংকটের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের মতামত,  বেশিরভাগ শ্রমিক পেশা বদল করে রিকশা-ভ্যান, ভটভটি, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, আবার অনেকেই অটোরিকশা সিএনজি চালাচ্ছে।

 

উপজেলার দামিয়া থেকে ধানকাটার শ্রমিক নিতে আসা আনোয়ার পাশা বলেন, শ্রমিকের মজুরি বেশি। এ দামে ধান কেটে পোষাবে না। তবু ধান তো আর মাঠে রাখা যাবে না। বাধ্য হয়ে শ্রমিক নিতে হচ্ছে।

 

কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিতে পারলাম না। মজুরি বেশি হওয়ায় আজ ফিরে যাচ্ছি।’ একই ধরনের কথা বলেন বেতুয়া গ্রামের শাহাদত হোসেন ও বহেড়াতৈল গ্রামের শামীম হোসেন।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, কৃষকরা হতাশায় থাকলেও দু-তিনদিনের মধ্যে শ্রমিক সংকট কমে যাবে। ঈদের কারণে শ্রমিকের দাম বেড়েছে। উপজেলায় সাতটি ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। মেশিন গুলো সল্প মূল্যে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে। এছাড়াও শ্রমিক সংকট দেখা দিলে অন্যান্য উপজেলার সঙ্গে যােগাযােগ করে শ্রমিক সংকট দূর করার চেষ্টা করব।

 

যাযাদি/এস