ফলন ভাল হলেও দুশ্চিন্তায় কৃষকরা, পানির অভাবে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে পাট
প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২২, ১৪:১৩
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো। কিন্তু পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় বেশির ভাগ পাট গাছ শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের জমিতেই। অনেকে কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পানি এনে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে পাটচাষিদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে পাটের উৎপাদন খরচ তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমি। তা বেড়ে ১ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। কিন্তু সময়মতো জাগ দিতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা। এমনটা হলে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনাবৃষ্টিতে জমির কাছাকাছি জলাশয়গুলোর পানি শুকিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড খরতাপে জমিতে থাকা পাটগাছ পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছ। এসব পুড়ে যাওয়া গাছ থেকে কোনো আঁশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর যাঁরা পাট জাগ দেওয়ার জন্য জমি থেকে দূরে ভাগ্যক্রমে কোনো জলাশয় পেয়ে গেছেন, তাঁদের পরিবহন খরচের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আর যাঁরা কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পানি এনে পাট জাগ দিচ্ছেন, তাঁদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই অবস্থায় ফলন ভালো হলেও তা হাসি ফোটাতে পারছে না এখানকার কৃষকদের মুখে।
উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের গুলিয়ারা গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের বলেন, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। কিন্তু আশপাশের কোথাও জাগ দেওয়ার মতো পানি না থাকায় দুই বিঘা জমির পাট কেটে তা আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের একটি জলাশয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এতে তাঁর পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি খরচও। আর জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় দুই বিঘা জমির পাট এখনো কাটতে পারিনি। জমিতেই অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো থেকে আর আঁশ পাওয়া যাবে না।’
একই অবস্থা ভাবকি উত্তমপাড়ার কৃষক নরেশ চন্দ্র রায়ের। পানির অভাবে তাঁর দুই বিঘা জমিতে লাগানো পাটগাছের পুরোটাই এর মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাকি দেড় বিঘা জমির পাট কৃত্রিম খাল তৈরি করে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচের পানি দিয়ে জাগ দিয়েছেন।
পাটের পাইকারি ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ ভালো মানের পাট ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাটের এই দর গত বছরের তুলনায় বেশি। গত বছর একই সময়ে এই পাট ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছিল। পানি না থাকার ফলে যেখানে-সেখানে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, আঁশের রং কালো হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক চাষি পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার বাসুদেব রায় বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় চলতি মৌসুমে খানসামা উপজেলায় সর্বাধিক পাটের আবাদ হয়েছে। কিন্তু বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না থাকায় কৃষকেরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। অনেক জমির পাট জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
যাযাদি/এস