মধুপুর বনের পিঁপড়ার ডিমে আবু বকরের সংসার
প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:০৮
জীবিকার জন্য কত বিচিত্র কাজই না করে মানুষ। তেমনি এক বিচিত্র পেশা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা। বন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করে পিঁপড়ার ডিম। তাও আবার লাল পিঁপড়ার ডিম। মাছ শিকারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে পিঁপড়ার ডিম। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে বনের ভিতর দেখা মেলে এমন এক পেশার মানুষের সাথে। নাম আবু বকর সিদ্দিক। বয়স ৪৫ বছর। তিনি কাঠ ফাটা রোদ আর ভাপসা গরমে ঘামার্ত শরীরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন লাল পিঁপড়ার ডিম। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকার কৈয়েরচালা গ্রামে। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে সংসার চালান।
পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সব পিঁপড়ার বাসায় ডিম পাওয়া যায় না। খুঁজতে হয় লাল পিঁপড়ার বাসা। যেখানে মিলবে প্রচুর পরিমাণ সাদা রঙের ডিম। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে সংগ্রহ করতে হয় এই ডিম। সারা দিনে ১ থেকে দেড় কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, এক সময় পিঁপড়ার ডিম সারাদিন সংগ্রহ করে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যেত। এখন সারাদিন পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করতে পারি।
সাধারণত দেশীয় গাছগুলোতেই লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। তবে আমাদের এখানে শালবনে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা মুখের লালা দিয়ে জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। ওই সব বাসা থেকেই ডিম পাওয়া যায়। বড় বাসা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কের সঙ্গে করতে হয়। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। ডিম আস্ত না রাখলে মাছ খায় না।
পৌরসভার দামপাড়ার নূরুল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক লোক আমাদের মধুপুর গজারি বনে আসে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। এই কাজে কোনো পুঁজি লাগে না বললেই চলে। এজন্য তারা এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন। এই ডিমের ক্রেতা হচ্ছে বরশি দিয়ে সৌখিন মাছ শিকারীরা। গ্রামের যারা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে কিনে নেয়ার জন্য বেপারিও আছেন। বেপারিরা কিনে নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা শহরে আবার কেউ কেউ ঢাকায় নিয়েও বিক্রি করে থাকেন। পানির নির্দিষ্ট স্থানে আধার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে অনেক।
চাপড়ি বাজারের শৌখিন মাছ শিকারী আব্দুস সালাম, আবুল কালাম, হযরত আলী, ইদ্রস আলী এবং আফসার উদ্দিন জানান, লাল পিঁপড়ার ডিম মাছ শিকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মাছ শিকারীদের কাছে এর চাহিদা অনেক। প্রায় ১৬ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করছেন তিনি। তবে শুধু আবুবকর সিদ্দিক নয়। পিঁপড়ার ডিমে জীবিকা নির্বাহ করে গ্রাম বাংলার অনেক মানুষ।