মেহেরপুরে সুখসাগর পেঁয়াজে আশার আলো দেখছে চাষী 

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৪৫

গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর প্রতিনিধি

মেহেরপুরে সুখসাগর পেয়াঁজে আশার আলো দেখছে চাষী। মেহেরপুরের চাষিরা ব্যাপক হারে সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ করে থাকে। ২০১৯-২০ সালের আলোচিত ঘটনা ছিল পেঁয়াজ। চাষীদের ঘরে পেঁয়াজ না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ফাইদা লুটে অস্থিতিশিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। সে চিত্র পাল্টাতে মেহেরপুরের চাষিরা ব্যাপক হারে পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়ে। বর্তমানে চাষীদের উৎপাদিত পেঁয়াজ এখন বাজার সয়লাব। 

বর্তমান বাজার দরে পেঁয়াজ কিনতে পেরে এখন ভোক্তারাও খুব খুশি। তবে  সুখসাগর পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় উত্তোলনের ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি না করার দাবি জানিয়েছে  পেঁয়াজ চাষিরা। ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে এই পেঁয়াজেই লাভের বদলে লোকসান গুণতে হবে এমন আশংকা চাষীদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায় চলতি মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ মাত্র ছিল ২ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। কিন্তু সে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ৩ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩২৫ হেক্টর বেশি। এবার এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে চাষীদের খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। এখন যে পেঁয়াজ উত্তোলন করা হচ্ছে তা বিঘা প্রতি ৮০ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত ফলন হচ্ছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ পাইকারী ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর কয়দিন পরে সব থেকে বেশি উৎপাদনশীল সুখ সাগর পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হবে। সুখ সাগর পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ১৮০ থেকে ২শ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। যদি এই দাম ঠিক থাকে তবে চাষীরা ভাল লাভবান হবে। চাষীরা মনে করে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হলে এই দাম অব্যাহত থাকবে। 

পেঁয়াজ চাষীরা জানান, এখন পেঁয়াজ উত্তোলনের ভরা মৌসুমে একসাথে সকলে পেঁয়াজ বাজারে নেওয়ায় দাম পড়ে যাচ্ছে। আবার এ পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করার মত কোন পরিস্থিতি নেই। ঘরে রেখে দিলেই পচে যায়। দরপতন হতে থাকলে  ও সংরক্ষনের কোন ব্যাবস্থা না করতে পারলে কাংখিত লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হবে তাদের। এবার সার-বিষ ও ডিজেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়লেও এখন দিন দিন কমছে পেঁয়াজের দাম। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেচ খরচ বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। মানুষের জীবন যাত্রার মানের সাথে বেড়েছে লেবার খরচ। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বাড়লেও কৃষি পণ্যের দাম বাড়তেই চায়না। 

বড় বাজার সবজী আড়ৎদার ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান যায়যায়দিনকে জানান, বর্তমানে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় এলসি করছেন না। তবে ভারতের মোটা পেঁয়াজ কিছু কিছু আমদানি করা হলেও বড় বড় বিভাগীয় শহরগুলোর হোটেলগুলোতে কিনে নেয়। মেহেরপুরে পর্যন্ত আসছে না। এলসির পেঁয়াজ বাজারে থাকায় ২০-২৫ দিন আগেও নতুন পেঁয়াজ উত্তোলনের শুরুতে পেঁয়াজের দাম কমে নুতন পেঁয়াজ পাইকারি ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এখন আবার দর উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে নতুন পেঁয়াজ ২৫-২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এলসির পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলে তখন আবার দ্রুত দাম পড়ে যাবে।        

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার যায়যায়দিনকে জানান, এক সাথে বেশি পেঁয়াজ উত্তোলন হওয়ায় দাম কিছুটা কমে যায়। তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষীদের লাভ হবে। কৃষকের পেঁয়াজ সংরক্ষনের ব্যাপারে সরকারী বে-সরকারী বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি শীঘ্রই এর সুফল পাবে চাষিরা । আশার কথা হচ্ছে  আগে ভারত থেকে উচচ ফলনশীল জাতের পেঁয়াজ বীজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করতো কৃষকরা। বর্তমানে নিজেরাই বীজ উৎপাদন করছে আশানুরুপ ফলনও পাচ্ছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় যে পরিমানে পেঁয়াজ উৎপাদন  হচ্ছে তা দিয়ে এ জেলার চাহীদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে। যা জাতীয় চাহিদায় ভুমিকা রাখবে। 

যাযাদি/ সোহেল