মহেশখালীতে সরিষা'র বাম্পার ফলন: প্রতিমণ ১৫০০ থেকে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৫০

মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত

ভোজ্যতেলের চাহিদার শতকরা ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে সরকার কে। এ অবস্থায়, দেশে ৫০ ভাগ তেল উৎপাদনের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমাতে তিন বছর মেয়াদি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন তথা প্রদর্শনীর মাধ্যমে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এতে প্রথম বছরেই এবার সারা দেশে দ্বিগুণ পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। আর এ উৎপাদনে পিছিয়ে নেই সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীও।

আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে পতিত জমিতে সরিষার আবাদ হওয়ায় একদিকে যেমন ধানের উৎপাদন কমছে না, অন্যদিকে কৃষকেরা অতিরিক্ত ফসল হিসেবে এই সরিষা পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মহেশখালীতে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে সরিষা চাষের। বারি-১৪ জাতের এ সরিষা চাষে বাড়তি আয় হয়েছে কৃষকদের। আমন ধান ঘরে তোলার পর বেশ কিছু সময় ফাঁকা পড়ে থাকে জমি। তাই আমন ঘরে তোলার পরপরই, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রণোদনায় তারা নেমে পড়েন সেই ফাঁকা জমি কাজে লাগাতে। রবি মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ফসল লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এরমধ্যে অন্যতম একটি ফসল হলো সরিষা। মহেশখালীর বেশিরভাগ এলাকা স্যাঁতস্যাতে হওয়ায় এসব জমি তুলনামূলক উর্বর বেশি এবং সরিষা চাষও ভালো হয়। এসব এলাকার বেশির ভাগ কৃষকই এবার তাদের জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল পেয়েছেন।  

একাধিক চাষির সঙ্গে আলাপকালে সরিষা আবাদ সম্পর্কে এমনই তথ্য ওঠে আসে।

কৃষক আলি আজগর জানান, বর্তমান সময়ে তাদের মতো কৃষকদের অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে তাদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা করতে হয়। সেই ভাবনা থেকে এবার তিনি প্রায় ১ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে কাটা মাড়াইয়ের কাজও শুরু করবেন তিনি। বিঘায় এই জাতের সরিষার ফলন হয়েছে গড়ে ৭ মণ হারে। তিনি আরও বলেন, সরিষা ফলন মন্দ হয়নি। দামও বেশ ভাল। বাড়তি আয়ের আশায় চাষ করে সরিষা থেকে বাড়তি লাভবান হয়েছেন।

অপরদিকে সরিষা মেশিনে ভাঙ্গার পর তেল উৎপাদন করে অবশিষ্ট উৎসৃষ্ট সরিষার খৈল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জমিতে জৈবসার, পশু খাদ্য, মাছের খাদ্য হিসেবেও ব্যাপক ব্যবহার করা হয় এটি। এক কথায় সরিষা একটি অনন্য কৃষি পণ্য যা মানুষের অসংখ্য কাজে লাগে। আমরা মাঠ পর্যায়ে সবসময় কৃষকদের ট্রেনিং সহ সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে সব ধরনের সহোযোগিতা দিয়ে আসছি।

ছৈয়দ নামের অপর এক কৃষক জানান, এবার বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছিলেন প্রায় ৮০ শতক জমিতে। ফলনও ভালো হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে অন্য ফসলের চেয়ে সরিষার বাজারদর ভাল। এ কারণে সরিষা আবাদ করে তিনি ঠোকেননি। বরং বেশ লাভবান হয়েছেন।

কৃষকরা জানান, তাদের মতো কৃষকদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা নিয়ে ফসল ফলাতে হয়। কারণ অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হয় অনেক সময়। সেই লোকসান সামলে নিতে বিকল্প ফসল নিয়ে ভাবতে হয় তাদের।
 
বড় মহেশখালীর কৃষক জাফর আলম বলেন, এবার শীতের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে ছিলো। এছাড়া সরিষা চাষে খুব একটা ব্যয়ও করতে হয় না। সরিষার জমিতে খুব বেশি চাষ দিতে হয় না। সার, বীজ, চাষ, সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকসহ প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। বর্তমান বাজারে প্রতিমণ সরিষা জাতভেদে ১৫০০ থেকে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৭ মণ হারে সরিষা পেলেও বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সব খরচ বাদে তাদের ভালই লাভ হচ্ছে।

মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা আমাদের লক্ষ্য মাত্রা পূরণ এবং মহেশখালীর ইতিহাসে এটিই প্রথম। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা বেশির ভাগ জমিতে লাগানো হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সরিষার ভাল দাম পাচ্ছেন বলেও জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সার, বীজ সহ প্রণোদনা সহায়তা দেওয়ায় দিনদিন সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বড় মহেশখালী ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হোসাইন আহমদ মাহফুজ বলেন, একটা সময় ছিল বোরো ও আমন ধানের আবাদ ছাড়া অন্য কোনও ফসল চাষ করতেন না চাষিরা। বর্তমানে দুই ফসলি জমিকে তিন বা চার ফসলি করে গড়ে তুলতে রবি শষ্য আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন তারা। বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে- জমি ফেলে না রেখে, তাতে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় বাড়তি কোনও তদারকির প্রয়োজন নেই সরিষা চাষে। এতে করে খরচ কম ও লাভজক এবং বাড়তি অর্থ দিয়ে বোরো আবাদ ভালোভাবে করতে পারায় মহেশখালীতো দিন দিন বাড়ছে সরিষার আবাদ।

যাযাদি/ এস