মানিকছড়ির গাছে গাছে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল, ভালো ফলনের স্বপ্নে চাষিরা

প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৭

মো. রবিউল হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়)

প্রকৃতিতে এখনো ফাল্গুন আসেনি, শীতও শেষ হয়নি। অথচ এরই মধ্যে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার আম বাগানগুলোতে গাছে গাছে ফুটেছে মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। আর এই মিষ্টি গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে। সেই সাথে এইসব বাগানগুলোতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মালিকরা। দেখছে আমের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন।

এই অঞ্চলের প্রকৃতিতে এবছর শীতের প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় বেশ আগেভাগেই মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে মানিকছড়ি উপজেলার পারিবারিক, ব্যক্তি ও বানিজ্যিক ছোট-বড় আম বাগানগুলো। থোকা থোকা মুকুলের ভারে ঝুলে পড়েছে আম গাছের ডালপালা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে গেলো বছরের চেয়ে চলতি বছরে বেশি ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ উপজেলায়।

সরেজমিনে উপজেলার বাটনাতলী, যোগ্যাছোলা, তিনটহরী ও মানিকছড়ি (সদর) ইউনিয়নের বিভিন্ন ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের আম বাগানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবকটি বাগানেই ঢালে ঢালে ঝুলছে আমের মুকুল। আন্ত সড়কের দু'পাশে ও প্রায় বাড়ির আঙ্গিনার আম গাছগুলোর সবুজ পাতা ঢেকে রয়েছে স্বর্ণালি মুকুলে। মুকুলগুলোতে এখন মৌমাছির গুঞ্জন।  শীতের স্নিগ্ধতার মধ্যেই ফাগুলের মৃদু বাসন্তি হাওয়ায় দোল খাচ্ছে স্বর্ণালী মুকুল। আর এইসব বাগান ও মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও শ্রমিকরা। মুকুল রক্ষায় ও ভালো ফলন ফলাতে বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন, কীটনাশক স্প্রে ও নানা পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করছে বাগান মালিকরা।

উপজেলার বাটনাতলী এলাকায় ২৭ একর টিলা ভূমিতে গড়ে তোলা উপজেলার সবচেয়ে বড় আম বাগানের মালিক মো. আবু তাহের জানান, ২০১১ সালে গড়ে তোলা তার বাগানে মোট ১২শ টির বেশি আম গাছ রয়েছে। যা থেকে ২০২১ সালে ৪০ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করেছেন। গেলে বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বিক্রি হয়েছে ২০ লক্ষাধিক টাকা। আর এ বছর অনেক আগেভাগেই মুকুল এসেছে গাছগুলোতে। অন্যন্য বছরের তুলনা এবছর সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছে। তাই অধিক গুরুত্ব ও বিনিয়োগে চলছে নিয়মিত পরিচর্যা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে উৎপাদন ও বিক্রিতে গেলো বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে এবছর।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি বাগান মালিকরা জানান, তুলনামূলকভাবে এবছর সবচেয়ে বেশি ও শতভাগ গাছে মুকুল এসেছে। মাঘের মাঝামাঝিতে বেশির ভাগ মুকুল আসায় ঝরে পড়ার আশঙ্কা কম এবং এগুলো স্থায়ী হবে। আগাম এমন বেশি মুকুল দেখার পর থেকে তাদের মন অনেকটা উৎফুল্ল। এই মুকুল টিকে থাকলে এবার বাম্পার ফলন পাওয়ার আশাবাদি তারা।

এ ব্যাপারে মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসিনুর রহমান বলেন, উপজেলার  গত মৌসুমে ৪৩০ হেক্টর টিলা ভূমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে।  উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৬০০০ মেট্রিক টন। এ বছর আগে-বাগেই আম বাগানে মুকুলে ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লক্ষমাত্রা আগের চেয়ে অন্তত ২০% বেশি হবে। তিনি আরও জানান, এই মূহুর্তে  মুকুল ও গাছ পরিচর্চায় ভূল করলে ফলন বিপর্যয় হবে।  আমের মুকুলের শত্রু হপার পোকা।  এর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে হলে, ইমিডা ক্লোরোপিট, প্রতি লিটার পানিতে ১মিলি বা আধা মিলি ঔষুধ মিশিশে ছিটাতে হবে। পাশাপাশি ছত্রাক নাশক (ম্যানকোজেব)ছিটালে আরও ভালো গাছে মুকুল আসা থেকে ফল পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ বার ঔষধ দিতে হবে।

যাযাদি/ এস