অনলাইনে সূর্যমুখী ফুল বাগান দেখে পাকিস্তানি তরুণী ভেদরগঞ্জে

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২৩, ১৬:৪৫ | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩, ১৯:২০

ভেদরগঞ্জ(শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

শরীয়তপুরে বিভিন্ন উপজেলায় রবিশস্যের আবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুল চাষের মাধ্যমে। চলতি বছর এ অঞ্চলে সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশাল ফুল আর বাম্পার ফলনে উৎফুল­ এই জেলার কৃষাণ ও কৃষাণীরা।

সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে হলুদ রঙের সূর্যমুখী দুর থেকে যে কারো মনকেড়ে নেবে। তাই সূর্যমুখী মাঠে দর্শনার্থীদের পদচারণা বেড়েছে। কেউকে টিকটক' সেলফীতে মেতে উঠেছেন।

জানা যায়, বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠগুলো। এদিকে আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুক‚লে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিসগুলোর সুত্রে জানা গেছে।

রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষকান্দি গ্রামে তিন জন কৃষকের ক্ষেতে সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে হাজার হাজার হলদে ফুলের হাসি ফুটে রয়েছে। প্রতিদিন ফুল দেখতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে বহু দর্শনার্থী এসে ভীর করছে এখানে।যেমন প্রতিদিন এখানে ঢাকা, মাদারিপুর, শরীয়তপুর সদর, নড়িয়া,সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছেন। কেউ পরিবার নিয়ে কেউ এসেছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আবার বন্ধুরা মিলে এসে বিভিন্ন স্টাইলে সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি তুলছেন। তাদের অনুভ‚তি আকাশছোঁয়া। 

এখানে সরকারি ছুটির দিন ৫ শ' থেকে ১ হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে।এতে করে বাণিজ্যর চাকাও ঘুড়েছে বেলুন ব্যবসায়ী শাহাদাত মৃধার।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, আগের বছরের তুলনায় এবছরে আমাদের জেলা রবি মৌসুমে তুলনামুলক স‚র্যমুখী ফুলের আবাদ বেশি হয়েছে। জেলা এ বছর সূর্যমুখী ফুলের আবাদের লক্ষমাত্রা ছিলো ২৫০ হেক্টর জমিতে।

তবে রবি মোসুমে ১৮০ হেক্টর জমিকে কৃষকরা এ ফুলের আবাদ করেছে। মোট ৭১ জন কৃষককে সরকারিভাবে প্রণোদনার হাইসান(৩৩) জাতের বীজ বিতরন করা হয়েছে। প্রত্যেককে ১ কেজি করে বীজ দেয় হয়। এবছরে সূর্যমুখী চাষীদের মুখে হাসী ফুটেছে। কারন এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে সূর্যমুখী তেলের দাম উদ্ধগতি। তাই অল্প খরচে বেশি লাভাবন হবেন কৃষকেরা।

মাঠে কৃষকের স্বপ্ন সূর্যমুখী ফুলে রঙিন হয়েছে। সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। সূর্যমুখী দেখতে রূপময় নয় গুণেও অনন্য। সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যর জন্য অসাধারণ। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং আরও উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।

কৃষিতে একের পর এক বিপ্লব সৃষ্টি করছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষিতে সাফল্যে মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হিসাবে স‚র্যমুখী চাষে নতুন স্বপ্ন দেখছে কৃষক।

মহিষকান্দি গ্রামের সূর্যমুখী চাষি সালাম দালাল জানান, সূর্যমুখী আবাদ এইবারই তিনি প্রথম করছেন। এটি নতুন স্বপ্ন তার। সরকারি প্রণোদনায় এই ব্লকে ৩ জন কৃষক ১ বিঘা জমিতে একটি প্লটে করে এক সঙ্গেই ঢালাওভাবে সুর্যমুখী আবাদ করছেন। 

তিনি আরো বলেন, এখানে প্রতিদিন বিকালে শত শত লোকজন আসে। সেদিন কুয়াকাটা থেকেও লোকজন আসছে সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসে। শরীয়তপুর থেকেও ছোট বড় ছেলে মেয়েরাও আসেন স‚র্যমুখী ফুল দেখতে। 

সূর্যমুখী ফুল চাষী ফজলুল হক দালাল জানান, আমি ৫ গন্ডা জমিতে স‚র্যমুখী ফুল চাষ করি। এবার সরকারিভাবে এক কেজি বীজ পাই। প্রাই ৭/৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ফলন ফালো হয়েছে। তবে দৈনিক অনেক লোকজন দুরদুরান্ত থেকে দেখতে আছে ফুল। ছবি তুলতে গিয়ে অনেকেই ক্ষেতের ফিতরে গেলে ফুলগাছ ভেঙ্গে যায়। আমাদের বিকাল হলেই ক্ষেতে এসে পাহারা দিতে হচ্ছে।

নড়িয়ার ঘড়িষার থেকে ইতালি প্রবাসী সোহেল -রীনা দম্পতি জানান, আমার বউ ফেসবুকে সূর্যমুখী ফুলের ছবির পোষ্ট দেখে এখানে আমাকে নিয়ে আসছে। আসলে শরীয়তপুরে দেখার মত কোন সুন্দর জায়গা নেই। তাই সূর্যমুখী ফুল ত সবসময় দেখা যায়না। আমরা এখানে এসে তেমন লোকজন দেখি নাই।এখন শতমত লোকজন দেখা যাচ্ছে। আমার সাথে কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে কেউ কেউ মাদারিপুর সহ শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছে। এই সূর্যমুখী ফুল চাষ যারাই করেছে তারা সফল উদ্দোগতা।

ইউনিভার্সিটির বড় আপুর ফেসবুক থেকে দেখতে পেয়ে রুমিনা আক্তার জানান, সত্যি খুবই সুন্দর লাগতাছে। আমরা চার পাঁচজন আসছি এখানে ফুলের ছবি তুলতেছি। আজকে এখানে শত শত লোকজন এসেছে। আমারা আজকে খুবই আনন্দ করছি।

ঢাকা থেকে শীমলা আক্তার তার ছোট বাবুকে নিয়ে আসেন এখানে সূর্যমুখী ফুল দেখতে। তিনি বলেন, আমারা এখানে এসে দেখি হলুদ ফুল আর ফুল। এখানে এসে মনটা অনেক ভালো হয়ে গেলো। আমরা সবাই সেলফী তুললাম। মনটা খারাপ ছিলো এখানে এসে ভালো হয়ে গেলো।

পাকিস্তানে জন্ম এক বাংলাদেশী তরুনী রাবেয়া আক্তারকে বলেন,মে পাকিস্তানছে আহে, পাকারকি লেকেন মে নেহি জানা হে।বহতহি আচ্চা লাগরাইহাপার আকার। অর ইয়াকা লগুকে বাদ আচ্চাহে তো বহদ আচ্চা লাগরাহে।/ আমার জন্ম পাকিস্তানে। আমার বাবার বাড়ি ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুরে। আমি অনলানে দেখলাম মহিষকান্দিতে অনেক সুন্দর সূর্যমুখী ফুল হয়েছে। আজ এখানে এসে দেখি অনেক লোকজন ফুল দেখতে আসছে। আমি হলদে ফুলের সাথে অনেকগুলা ছবি তুলতাছি। আমার অনেক ভারো লাগতাতে। সাদারনত সূর্যমুখী ফুল কোথায় দেখতে পাওয়া যায়না। তাই এখানে এসে মনটা ভালো লাগলো।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতমা ইসলাম (কৃষিবিদ) জানান, স‚র্যমুখী একটি লাভজনক ভোজ্যতেলের ফসল। তাঁর উপজেলায় এবার ফসলটির ভালো ফলন হয়েছে। 

এতে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আমরা ১৪ জনকে কৃষককে হাইসান(৩৩) সূর্যমুখী বীজ বিতরন করি। মহিষকান্দিতে তিনজন আমাদের প্রণোদনার মাধ্যমে এ ফুল চাষ করছেন এবং ফালো ফলন হয়েছে। শুনলাম সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে এসে অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোট দিচ্ছে। এইটা এখন জেলার অন্যতম দর্শনার্থীর স্থান হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে।ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে এ ফসল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (খামারবাড়ি শরীয়তপুর) ড.রবীআহ নুর আহমেদ জানান, সরকারি প্রণোদনা ও রাজস্ব খাতে এবার ব্যাপক সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। গত বছর রাজস্ব খাতে অল্প কিছু আবাদ করা হয়েছিল। 

এতে দেখা যায় এই অঞ্চল সূর্যমুখী চাষের জন্য আবহাওয়া ও মাটি অত্যান্ত উপযোগী। ফলে চলতি বছরেও সরকারি প্রণোদনায় কৃষকদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষ বাড়ানো হয়। এটি একটি ভালো তেল ফসল। কৃষকরা এবার এই তেল বিক্রি করে অনেক টাকা লাভবান হবেন।
যাযাদি এম