খাগড়াছড়িতে বাড়ছে সূর্যমুখী চাষ 

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২৩, ১১:১৩

রিপন সরকার খাগড়াছড়ি
ছবি-যাযাদি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বাড়ছে সূর্যমুখী চাষ। জেলা সদর ও মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়িসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়  সূর্যমুখী চাষ করেছেন কৃষকরা।  এ যেন সূর্যমুখী ফুলের রাজ্য। 

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গোলাবাড়ি ইউনিয়ন ও মহালছড়ি  উপজেলার মাইসছড়ি জয়সেন পাড়া এলাকার কৃষকরা চাষ করেছেন এ সূর্যমুখী। যতদূর চোখ যায়। হলুদ রঙের ঝলকানি দেখা যায়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য।

বর্তমানে প্রতিদিন সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছেন এখানে। বসন্তের হাওয়া বইছে চারপাশে। সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। সকাল বেলা পূর্বদিকে তাকিয়ে থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের সাথে ঘুরতে থাকে।

একদিকে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ার দৃশ্য, অন্যদিকে সূর্যমুখী ফুল তাকিয়ে থাকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। মৌমাছিরা শেষ বিকেলে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সূর্যমুখী ফুল থেকে। তাছাড়া প্রতিদিন দেখা যায় প্রজাপতির মেলা। প্রাকৃতিক এ অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। এখানে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আগত দর্শনার্থীর একদল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত, আরেক দল নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। অন্য দল ব্যস্ত টিকটকে ভিডিও তৈরিতে। তবে কৃষকরা মোটেও খুশি নন দর্শনার্থীদের আগমনে।

কৃষক চাই হ্লা, ও অংছাচিং মার্মা  বলেন, এবছর আমরা নিজেদের অর্থায়নে ২০ শতক (একর) জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করি। বীজ ও সার ছাড়া ২০ শতক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে আমার ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আগত দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী গাছ ভেঙে ফেলেন। ফুলও ছিড়ে ফেলেন। তাই দর্শনার্থীদের কাছে কৃষকের অনুরোধ, তারা যেন সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের কোনো ক্ষতি না করেন।

মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও  সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল  ও মাইসছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো গিয়াসউদ্দিন লিডার  বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফুল অনেকেরই মন কেরেছে। যিনি ক্ষেতটি চাষাবাদ করেছেন, তাকে অনেক ধন্যবাদ। যেন ভবিষ্যতে আরও মানুষকে সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দেন।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের  খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন  জেলায় সূর্যমুখী চাষাবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাজারে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের তেল কিনতে পাওয়া যায়। যদিও সূর্যমুখী ফুলের তেল বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। ফুল থেকে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে মধুও উৎপাদিত হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি  কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মানিক মিয়া  বলেন, এবছর খাগড়াছড়িতে প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর বেশি  সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।  প্রতি কেজি বীজ থেকে ৩০০ গ্রাম সূর্যমুখী তেল পওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকলে থাকলে এবছর সূর্যমুখী চাষিরা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা সুর্যমুখী গাছে ফুল ফুটে আছে। ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। সুর্যমুখী ফুল দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মাইসছড়ি   ইউনিয়নের কৃষক চাই হ্লা,  অংছাচিং মার্মা ও জেলা সদরের গোলাবাড়ি ইউনিয়নের মেম্বার রামকুমার ত্রিপুরা, ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার শ্রী মতি গৌরি ত্রিপুরা বলেন, কৃষকরা এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছে।  সূর্যমুখী চাষে খুব বেশি পরিশ্রম হয় না। শুধু বীজ বপণে একটু শ্রম দিতে হয়। এরপর দেখভাল করলেই চলে। 

কৃষি কর্মকর্তারা জানান  ডিসেম্বরের শুরুতে ক্ষেতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়েছিল। ফসল ঘরে তোলা যাবে এপ্রিলে। চাষীদের চাষ করতে বিশেষ সমস্যা বা তেমন খরচ নেই। একজন চাষি বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করে তৈলবীজ পেতে পারেন। বিশেষ করে এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলমুক্ত। সূর্যমুখীর তেল শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাটযুক্ত। এ তেলে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও পানি। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। তাই দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বারি-৩ জাতের নতুন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে একদিন দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাবে ।

যাযাদি/ এস