মেহেরপুরে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে পুষ্টিতে ভরপুর সজিনা ডাটা

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৩:২১

গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর প্রতিনিধি

“সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি। খোকা তুই কবে আসবি? কবে ছুটি?”, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহের কবিতার সেই সজনে গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সজনে ডাটা। চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলার প্রতিটি গ্রামের বাড়ির পাশে পতিত জমি, রাস্তার পাশে, আনচে-কানাচে যত্নে-অযত্নে বেড়ে ওঠা প্রতিটি সজনে গাছের শাখা-প্রশাখা নুয়ে পড়ছে ডাটার ভারে। 

বহুগুণে গুনান্বিত জাদুকরি সবজি এই সজনে ডাটা মেহেরপুর জেলায় এখনও কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু না হলেও বাজার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সজিনা গাছগুলির প্রতি যত্নশীল হয়েছে গাছ মালিকরা। আর হবেইনা বা কেনো ? প্রথম যখন ডাটার পূর্নতার আগে বাজারে ওঠে তখন এর দাম হয় ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি। যা সাধারন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে ডাটা যখন পরিপুর্ন রুপ নিয়ে বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে এখন ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসছে প্রচুর। সজিনা উৎপাদনের উপর চাষীদের কোন খরচ হয়না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজিনা ডাটা উৎপাদন হয় তার সবটুকুই চাষীর লাভ।

জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজিনার গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নাই তবে গত ৬ বছর আগে জেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে মুজিবনগর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলায় কয়েকটি গ্রামকে সজিনা গ্রাম নামে নামকরন করে ১০ হাজার সজিনা চারা বিতরণ করে। পরবর্তিতে সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলেও সেই গ্রামগুলিতে এখন সজিনা গ্রাছে ভরে গেছে। সেখান থেকে চাষীরা লাভবান হওয়ায় গতবছর সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আরো প্রায় ৫০ হাজার সজিনা গাছের ডাল ও চারা চাষীদের মাঝে বিতরণ করে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চাষীরা তাদের নিজের উদ্যোগে সজিনা গাছ লাগিয়েছে। সেই হিসেবে কৃষি বিভাগের ধারনা জেলায় জেলায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে লক্ষাধিক সজিনা গাছ আছে। গড়ে প্রতিটি গাছে ২০ কেজি করে সজিনা ফলন পেলে ২০০ টন সজিনার ডাটা উৎপাদন হবে বলে ধারনা কৃষি বিভাগের।   

মেহেরপুর সদর উপজেলার রোঘুনাথপুর গ্রামের সজনে চাষী আলেকুজ্জামান যায়দিনকে জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাঠে কোন জমিতে সজনে চাষ করেন না। তার বাড়ির চারপাশে ১০টি সজনে গাছ লাগিয়েছেন। এই গাছগুলি লাগাতে কোন খরচ হয়নি তার। তিনি প্রতি মৌসুমে ৬-৭ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করে থাকেন। এবার গাছে যে পরিমান ডাটা ধরেছে তাতে তিনি আশাবাদি ১০ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করবেন।  

একই গ্রামের আর এক চাষী  আব্দুল মাবুদ জানান, এখন সজিনা গাছে থোকায় থোকায় ডাটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ডাটায় পরিপূর্ণ। তিনি মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছেন। তবে সজিনা গাছগুলোতে যে পরিমাণ ডাঁটা পাওয়া যায় তা পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বিক্রিও করেন তিনি। তিনি আরো জানান, সজিনা এমন এক ধরনের গাছ যা গাছের ডাল লাগালেই হয়। পরিচর্যা বলতে লাগানোর পর কয়েকদিন কয়েক বালতি পানি দিলেই মাটিতে গাছ লেগে যায়। এর প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। তবে ঝড়ে যদি ডাল ভেঙ্গে যায় তাতে সমস্যা নাই যদি গাছটা ঝড়ে উপড়াতে না পারে।

সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতি বাড়ীতে কমবেশি সজিনা গাছ আছে। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শ্কংর কুমার মজুমদার যায়যায়দিনকে জানান, দেশে সজনে সচারাচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমী এবং বারমাসী। মেহেরপুরে আগে বারমাসী জাতের সজনে আবাদ কম হলেও এখন তা বাড়ছে। কেননা বারোমাসীতে উৎপাদন বেশি হয়। সাধারণত অন্যান্য ফসলাদির মত সজনে গাছের জন্য কোনো চাষাবাদ কিংবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। মূলত গ্রামাঞ্চলের লোকেরা নিজ বাড়ির পাশে বা অনুপযোগী ক্ষেতের আইল, অথবা রাস্তার দু’পাশে সজনে গাছের ডাল লাগিয়ে থাকেন এবং অযত্নে বেড়ে ওঠা এই সজনে গাছ এক থেকে দু’বছরের মধ্যে ফুল ফল দেয়। যেহেতু এখন সজিনা ডাটার গুণাগুণ সমন্ধে মানুষ জেনে গেছে। ফলে ডাটা খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের মাঝে সজিনা চারা বিতরন করে সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

যাযাদি/ এস