কালিয়ায় ঘেরের পাড়ে বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল কৃষক

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৬

মোঃ খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার গোবিন্দপুরে ভক্তডাঙ্গা বিলে ঘেরের পাড়ে সবজি চাষে সফল কৃষক। পতিত জমিতে গড়ে ওঠা চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের পাড়ে ক্ষতিকারক কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই হচ্ছে সবজি চাষ। 

চল্লিশ থেকে শুরু করে সাড়ে তিনশ একরের বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত প্রায় ৫০ টি ঘেরে বদলে গেছে পরিত্যক্ত বিলের চিত্র। ঘেরে মাছ ও পাড়ে নানা ধরনের সবজি চাষ করে ইতোমধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন এ অঞ্চলের বেশ কয়েকজন কৃষক। এসব ঘেরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এলাকার বেকারদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ বিলে অবস্থিত ছোট-বড় সকল ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ হচ্ছে। কোথাও দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি টমেটো গাছ। গাছে ঝুলছে লাল টকটকে টমেটো। পাড়ে তৈরী মাচায় ঝুলছে লাউ। কোথাও শষা, করলা আবার কেথাও আবাদ হচ্ছে কুমড়া।

এভাবেই বছরজুড়ে এখানে আবাদ হচ্ছে বিষমুক্ত  নানান জাতের সবজি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ঘেরের পাড় থেকে স্থানীয় বাজারসহ এসব সবজি যাচ্ছে রাজধানীতে। প্রযুক্তির কল্যাণে টাকাও চলে আসছে কৃষকের মুঠোফোনে। ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ। 

এ বিলের সবচেয়ে বড় ঘের মালিক নুপুর এন্ড ব্রাদার্স মৎস্য খামারের সত্ত্বাধিকারী শিবনাথ রায় জানান, এক সময় লঞ্চে কলা বিক্রি করতেন। পাশ্ববর্তী বড়দিয়া বাজারের একটি দোকানেও সাত বছর কাজ করেছেন।পরে ধীরে ধীরে তার মৎস্য ঘেরটিও বড় করতে থাকেন। এখন তার ঘেরটি ৩২৬ একর জমির উপর। আর এ ঘেরের পাড়ে টমেটো, উচ্ছে, করলা, শষা, পেঁপে, কুমড়াসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করছেন। সবজি চাষে আমি কোন ক্ষতিকারক কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার করি না। আমার ঘেরে সময়ভেদে কাজ করেন ২২ থেকে ৪২ জন শ্রমিক। 

ঘের মালিক প্রদীপ বর্মন বলেন, তার ৯৫ একরের ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে সবজি চাষ করেন। আগাম তরমুজ, উচ্ছে, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন তিনি। ঘেরের পাড় উচু হওয়ায় প্রতিটা সবজি আগাম চাষ করা যায়। আগাম চাষ করলে বাজারে দামও বেশি পাওয়া যায়।  ঘেরে ধান চাষও করা হয়। 

আরো কয়েকজন চাষী ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এখানে কিছু কিছু জমিতে আউশ-আমন হত এবং অধিকাংশ সময় জমি খালি পড়ে থাকত। পরে কৃষক তার ভাগ্য উন্নয়নে ঘের করে তাতে মাছ চাষ এবং পাড়ে সবজি চাষ করে কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। তাদের সাফল্য দেখে আরো অনেকেই এ ধরনের চাষাবাদে আগ্রহী হয়েছে।

এসব মৎস্য ঘেরে কর্মরত শ্রমিকেরা জানান, এসব মৎস্য ঘের হওয়ায় স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি অনেকেই ঘেরে কাজ করছেন। এখানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তাদের সংসার।

কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, কালিয়া পৌরসভার ভক্তডাঙ্গা বিলে অবস্থিত ঘেরগুলোতে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে সবজি এবং বোরো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। একই জমি থেকে তিন ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এখানে সব সবজিই আগাম চাষ হয়। এ কারণে বাজারে ভালো দাম পান তারা। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

যাযাদি/ এসএম