আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছে গাংনীর চাষিরা
প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪২
স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনীর চাষিরা। তাছাড়া ভরা মৌসূমে অনেকেই লোকসান গুনেন। তাই আগাম সবজি চাষে যেমন চাহিদা তেমন লোকসানের ভয় না থাকায় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ঝুকছেন চাষিরা। বিশেষ করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। কৃষি বিভাগের দাবি, আগাম জাতের সবজি চাষ করে চাষিরা অল্প সময়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০৪ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি ও ৩৩ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত আগাম শীতকালিন কপির আবাদ সর্বোচ্চ। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি কৃষি ক্ষেত্রেও ঘটছে উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা। আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপিগুলো দেখতেও বেশ চমৎকার এবং খেতে সুস্বাদু। আগাম হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। পাশাপাশি খুব বেশি কৃষক এ আবাদ না করায় ভালো দামে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। আবার অনেকে নিজেরাই স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে ভালো দামে রপ্তানি করছেন।
চাষিদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, আগাম শীতকালিন ফুলকপি উৎপাদনে খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা। আর ক্ষেত থেকেই ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে মোটা টাকা লাভের মুখ দেখেছেন কৃষকরা। তবে অতিরিক্ত বর্ষা হলে ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকরা। চলতি বছরে যেহেতু বর্ষা মৌসুমে বর্ষা কম হয়েছে, তাই রোগবালাই কম হওয়ার পাশাপাশি পচার হাত থেকেও বেঁচে গেছে ক্ষেত।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, আগাম সবজি বৈশাখ মাস থেকে শুরু হয়ে শীত আসলে শেষ হয়ে যায়। বাধাকপি ও ফুলকপিতে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সার, কৃটনাশকসহ বিভিন্ন পরিচর্যায় খরচ থাকলেও সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কীটনাশকে। কিন্তু খুব অল্প সময়ে ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চলতি বছরে কপি বিক্রি হচ্ছে। গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের আগাম বাধাকপি চাষি আলি হোসেন জানান, চলতি বছরে ১০কাঠা জমিতে আগাম জাতের বাধাকপি চাষ করেছিলেন।
১০-১২ হাজার টাকা খরচ হলেও ক্ষেত থেকেই ৩৩ হাজার টাকায় কপি বিক্রি করেছেন। তিন মাসও লাগে না এতে আমার লাভ ভালো হয়।
সাহারবাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া জানান, আগাম শীতকালিন সবজিচাষিদের কাছ থেকে ঠিকা হিসেবে ক্রয় করেন। ক্ষেত থেকেই সবজি পুষ্ট না হতেই ক্রয় করেন। ফুলকপি বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ও বাধাকপি ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রয় করেন। এবছরে এখন পর্যন্ত ৬০ বিঘা জমির বাধাকপি ও ফুলকপি ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করেছেন। আরো মাস খানেক ধরে বিক্রি করবেন বলেও আশা করছেন তিনি। শীত মৌসুম চেয়ে আগাম শীতকালিনের চাহিদা বেশি।
ধলা গ্রামের স্বপন মিয়া জানান, তিনি সবজি চাষ ও ব্যবসা করেন। স্থানীয় ফরিয়া হিসেবে বিভিন্ন চাষিদের জমি থেকে বাধাকপি ও ফুলকপি ক্রয় করেন। আগাম শীতকালিন ফুলকপি ও বাধাকপিতে তুলনা মূলক অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি লাভ হয়। আগাম ফুল কপি ও বাধা কপি চাষে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি বাজারে চাহিদা থাকায় ব্যবসায়িরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার জানান, মেহেরপুর জেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বাধাকপি ও ফুলকপি চাষ হয় বেশি। চাষিরা বছরে তিন চারবার সবজি উৎপাদন করে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের জেলায় উৎপাদিত সবজি রপ্তানি করে চাষিরা লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে। আগাম শীতকালিন সবজি একটি ভালো লাভজনক ফসল এতে চাষিরাও লাভবান হচ্ছে, দেশও লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগ চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছেন সবজি আবাদে।
যাযাদি/ এসএম