মাল্টা চাষে সফল উদ্যোক্তা মুরাদ
প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২
ভিটামিস সি, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, চর্বিমুক্ত ক্যালরি, ফসফরাস সমৃদ্ধ রসালো ফল মাল্টা। একসময় মাল্টা ফল দুর্লভ হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে অত্যন্ত সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় ফল মাল্টা। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফলে রয়েছে প্রচুর ঔষধি গুনাগুন।
বিশেষ করে জ¦র, ঠান্ডাজনিত কাশি, মাথাব্যথাসহ অনেক রোগের জন্য ব্যাপক কার্যকর ভূমিকা রাখে এই ফল। একসময় প্রবাসের ফল হিসেবে পরিচিত এ ফল বাংলাদেশে শুরুতে পাহাড় কেন্দ্রীক চাষাবাদ শুরু হয়। দেশের পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদের ফলে একে পাহাড়ি ফল হিসেবে চিনলেও বর্তমানে পুরো দেশের সমতল ভূমিতেও সমানতালে চাষ হচ্ছে এ ফলের।
সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষে সফলতা দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পৌর সদরের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বানিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন মোঃ ফরহাদ হোসেন মুরাদ।
পৌর সদরের নোয়াপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে ফরহাদ হোসেন মুরাদ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসার পাশাপাশি শখের বশে গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে শখের বশে মাল্টা চাষাবাদ শুরু করেন। মাল্টার ব্যাপক ফলন দেখে বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। তার আগ্রহ এবং সফলতা দেখে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চলতি বছর ২একর জমিতে মাল্টা চাষাবাদ করেছেন মুরাদ। মাল্টা চাষে মুরাদের সফলতার গল্প এলাকার গন্ডি পেড়িয়ে পৌছে গেছে উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে।
ইতোমধ্যেই জেলা কৃষি অফিসার, বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তাও মুরাদের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেছেন। তারা মুরাদকে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাসও দিয়েছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ২একর জমিনের মাল্টা বাগানটিতে চায়না কমলা, বারি-১ জাতের মাল্টা এবং ভিয়েতনাম জাতের মাল্টা গাছ। গাছের সবুজ পাতার আড়ালে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা মাল্টার দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভীর করছেন আশেপাশের ক্রেতা এবং উৎসুক জনতা। প্রায় সবগুলো গাছেই বিক্রি উপযোগী বিভিন্ন প্রজাতীর পাকা-কাঁচা মাল্টার সমাহার দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, উদ্যোমী যুবক ফরহাদ হোসেন মুরাদ পড়ালেখা শেষ করে অন্য পেশায় না গিয়ে মাল্টার চাষাবাদ শুরু করেছেন। এর পাশপাশি তিনি বার্মি কম্পোষ্ট (জৈব সার) সার উৎপাদন, কেঁচো চাষাবাদও শুরু করেছেন বানিজ্যিকভাবে। তার উৎপাদিত জৈব বানিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জৈব সার উৎপাদন, কেঁচো চাষাবাদেও সফল উদ্যোক্তা ফরহাদ হোসেন মুরাদ। তারা আরও জানান, মুরাদ এগ্রোতে উৎপাদিত জৈব সার উপজেলা কৃষি অফিস নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেছে।
তার পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং সফলতা দেখে আশেপাশের অনেক যুবক মাল্টা, কেঁচো চাষসহ উদ্যোমী পেশায় আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
মুরাগ এগ্রোর মালিক এবং স্থানীয় কৃষি সমিতির সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন মুরাদ যায়যায়দিনকে জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাল্টার চাষাবাদ পর্যবেক্ষন করে চাষাবাদ শুরু করেছেন তিনি। একসময় অন্য পেশাকে বেছে নিলেও বর্তমানে মাল্টা চাষাবাদি তার প্রধান পেশা। অন্তত ৬লক্ষ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ২একর জমিনে চায়না কমলা, বারি-১ জাতের মাল্টা এবং ভিয়েতনাম জাতের মাল্টা গাছ চাষ করেছেন তিনি। প্রায় সব চলতি বছরে ২.৫ থেকে ৩টন মাল্টার ফলন আশা করছেন ফরহাদ হোসেন মুরাদ। বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোন কারণে ক্ষতি না হলে চলতি বছর অন্তত ৩লক্ষ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ সোলায়মান মজুমদার বলেন, উচ্চ শিক্ষিত ফরহাদ হোসেন মুরাদ ভারত সীমান্তবর্তী নিচু ভূমিতে মাল্টার বানিজ্যিক চাষাবাদে পরামর্শ চাইলে আমি শুরুতে নিষেধ করি। নিচু ভূমি হওয়ায় ভারতের পাহাড়ি ঢলে নিয়মিতই প্লাবিত হওয়ায় আশংকা রয়েছে এ ভূমির। কিন্তু তার আগ্রহ দেখে আমি নিচু ভূমি উপযোগীভাবে চাষাবাদে পরামর্শ প্রদান করি। নিচু এই ভূমিতে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে, তার পরিশ্রম, উদ্যমতা এবং একাগ্রতার ফলে চাষাবাদের ১ম বছরেই ব্যাপক সফলতা দেখেছেন তিনি। শুধু মাল্টা চাষাবাদই নয় বার্মিং কম্পোষ্ট সার (জৈব সার) উৎপাদন, কৃত্রিম পদ্ধতিতে কেঁচো চাষেও ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন মুরাদ। প্রতি ২ মাসে শুধুমাত্র জৈব সার বিক্রি করেই লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন তিনি। সর্বোপরি একজন সফল উদ্যোক্তা, সফল কৃষকের উদাহরণ মুরাদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের হোসাইন বলেন, মুরাদ একজন তালিকাভুক্ত কৃষক। খুব অল্প সময়ে বানিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষাবাদ, র্কেঁচোর চাষাবাদ এবং জৈব সার উৎপাদন করে পুরো উপজেলায় নজর কেড়েছেন ফরহাদ হোসেন মুরাদ।
উপজেলা কৃষি অফিস সবসময় পরামর্শসহ সহযোগীতা করে আসছে মুরাদ এগ্রোর মাল্টা বাগানসহ সকল প্রজেক্টে। আমি নিজেও কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। উৎপাদনের প্রথম বছরের মাল্টার ব্যাপক ফলন হয়েছে মুরাদের মাল্টা বাগানে। চলতি মৌসুমের সেপ্টেম্বরের শেষ সময়ে মাল্টাগুলো বিক্রি করলে আরও বাড়তি টাকা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যাযাদি/ এস