লামায় রঙ্গিন ফুলকপি চাষে সফল অনুপম বড়ুয়া
প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৬:৪৭

বান্দরবানে লামা উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছে উপজেলা রূপসীপাড়া ইউনিয়নের দরদরী এলাকার গগণ মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা মহেন্দ্র বড়ুয়ার ছেলে কৃষক অনুপম বড়ুয়া। এই কৃষক তাঁর নিজ জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি প্রথমবারের মত চাষাবাদ করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন।
মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) লামা বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে পাইকারি দরে বিক্রির জন্য নিজের খেত থেকে রঙ্গিন ফুলকপি সংগ্রহ করছেন অনুপম বড়ুয়া। খেতের চারপাশে যেন নানান রঙের মেলা বইছে, সবুজ পাতায় মোড়ানো লাল, হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চোখ জুড়াচ্ছে। এই চমৎকার আকারে রঙ্গিন ফুলকপি দেখে স্থানীয় কৃষক মুগ্ধ। কেউ কিনছেন আবার এটা দেখে কেউ চাষের পরামর্শ নিচ্ছেন কৃষক অনুপম থেকে। গত সোমবার (০৩ মার্চ) উপজেলা অফিসে রঙ্গিন ফুলকপি ফলন পদর্শন করান এই কৃষক। এই সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোছা. শাকিলা আক্তার, সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মহি উদ্দিন, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ বড়ুয়া ও অঞ্জনশ্রী দে, সহ প্রমুখ।
কৃষক অনুপম বড়ুয়া বলেন, আগে তিনি নিয়মিত সাদা ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩৩ শতক নিজ জমিতে হাইব্রিড রঙ্গিন জাতের এই ফুলকপি চাষ করেন। এই ফুলকপি চাষের জন্য বিশেষ কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। সব মিলিয়ে ৮-১০ হাজার টাকার খরচে তিনি ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছেন। বর্তমানে প্রতিটি রঙ্গিন ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে ৩৫-৪০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে স্বল্প খরচে বেশি লাভবান হয়েছি। আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি চাষাবাদ করব।’
উপজেলা কৃষি বিভাগ উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানায়, ২০২৪-২০২৫ রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ওই কৃষককে চারা বিতরণ, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। রঙ্গিন ফুলকপির আকর্ষণীয় রং ও স্বাদ ভালো হওয়ার কারণে বাজারমূল্য সাদা ফুলকপির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে কৃষকেরা কম পুঁজিতে অধিক লাভবান হতে পারেন। তাছাড়া সার্বক্ষণিক কৃষককে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী মৌসুমে এই রঙ্গিন ফুলকপি চাষাবাদের কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমি আশা রাখছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামান বলেন, "লামা উপজেলায় বিভাগীয় স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে গত বছর রঙ্গিন বাঁধাকপি চাষ করা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর রঙ্গিন ফুলকপি (হলুদ রঙ) আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফুলকপির স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি। হলুদ রঙের হওয়ায় এতে থাকে বিটা ক্যারোটিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তিনি আরো জানান, রঙ্গিন ফুলকপি আবাদে কৃষক অনুপম বড়ুয়া সফলতা অর্জন করেছেন এবং এটি গ্রাহক পর্যায়েও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আগামী মৌসুমে কৃষকরা কৃষি বিভাগের উদ্যোগের পাশাপাশি নিজ নিজ অবস্থান থেকেও রঙ্গিন ফুলকপির আবাদ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
যাযাদি/ এমএস