তিস্তা চরের ‘স্ট্রবেরি’ এখন দুই প্রবাসীর গলার কাটা
প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:১৩

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় স্ট্রবেরি চাষ করে মহা দুঃশ্চিতায় পড়েছেন দুই কৃষক। কেন না লাভবান হওয়ার আশায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চাষ করা স্ট্রবেরি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের। ফলন ভালো না হওয়ায় পুঁজি হারানোর দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটছে প্রবাস ফেরত দুই কৃষকের।
দেখা গেছে, জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বালু চরের বেলে ও দোআশ মাটিতে দেশের বৃহৎ স্ট্রবেরির চাষ করে প্রবাস ফেরত দুই তরুন কৃষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ও হারুনুর রশিদ। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন তারা। মন জুড়ানো স্ট্রবেরি শোভা পাচ্ছে তিস্তার বিস্তৃর্ণ ধুধু বালু চরে। সবুজ গাছের থোকায় থোকায় লাল ফলে আবৃত হয়ে আছে স্ট্রবেরি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত নভেম্বর মাসে ৬টি জাতের সাড়ে তিন লাখ স্ট্রবেরি চারা লাগিয়েছে এই দুই উদ্যোক্তা। স্ট্রবেরি চাষের শুরুতে চমক সৃষ্টি করলেও বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন তারা। ক্ষেতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ স্ট্রবেরি গাছ থাকলেও ফলন না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।
তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করি। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই বিদেশি ফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করার ইচ্ছা ছিল। এই ফল খুচরা বিক্রি হয় ৭০০- ৮০০ টাকা কেজি। চরে আলু, গম, ভুট্টার চেয়ে স্ট্রবেরিতে অনেক লাভজনক জেনেছি। চারা রোপণের ৪৫ হতে ৬৫ দিনের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। প্রতি একরে ১০টন করে ফলন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। চারার গুণগত মান খারাপ হওয়ায় সে আশায় গুড়ে বালি। এখন লাভ তো দূরের কথা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচ লাখ টাকার ফলন উৎপাদন করাও সম্ভব হবে না বলে জানান এ দুই উদ্যোক্তা।
স্ট্রবেরি ক্ষেতে নিয়োজিত কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, আমিসহ মোট তিনজন শ্রমিক স্ট্রবেরি ক্ষেতে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি।অনেক আশা নিয়ে স্ট্রবেরি চারা গাছগুলো লালন পালন করি। কিন্তু সঠিক সময়ে কাঙ্খিত ফলন না আসায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। স্ট্রবেরি চাষে লাভবান হলে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে এই ফল চাষাবাদে হতো। কৃষি বিভাগের দায়িত্বহীনতা আর চারা নির্বাচনে ভুল হওয়ায় বিশাল ক্ষতি হয়েছে
স্ট্রবেরি ক্ষেত দেখতে আসা মোঃ নুর ইসলাম বলেন, স্ট্রবেরি ক্ষেত দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এই স্ট্রবেরি ফল বাজারে কিনে খেয়েছি কখনও ক্ষেত দেখা হয় নাই। ক্ষেত দেখে ভালো লাগলেও ফলন আর সম্ভাবনার কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উলিপুরের বজরায় তিস্তা নদীর চরে ১২ একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছে আব্দুর রাজ্জাক ও হারুনুর রশিদ নামে দুই কৃষি উদ্যোক্তা। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে তাদেকে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছি। শীত মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষ হয় এবং কুড়িগ্রামের আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। তারা যদি সাফল্য পায় তাহলে জেলা জুড়ে স্ট্রবেরি চাষ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
যাযাদি/ এমএস