ডাটায় ডাটায় ভরে গেছে সজিনা গাছ

প্রকাশ | ১১ মার্চ ২০২৫, ১৬:৫০

মেহেরপুর প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

“সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি। খোকা তুই কবে আসবি ? কবে ছুটি ?”, কবির এই কাব্যিক আবেদনের বাস্তব চিত্র মেহেরপুর জেলার প্রতিটি গ্রামের বাড়ির পাশে পতিত জমি, রাস্তার পাশে, আনচে-কানাচে যত্নে-অযত্নে বেড়ে ওঠা প্রতিটি সজনে গাছের শাখা-প্রশাখা নুয়ে পড়ছে ডাটার ভারে। 

বহুগুণে গুনান্বিত জাদুকরি সবজি এই সজনে ডাটা মেহেরপুর জেলায় এখনও কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু না হলেও বাজার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সজিনা গাছগুলির প্রতি যত্নশীল হয়েছে গাছ মালিকরা। আর হবেইনা বা কেনো ? প্রথম যখন ডাটার পূর্নতার আগে বাজারে ওঠে তখন এর দাম হয় ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি। 

যা সাধারন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে ডাটা যখন পরিপুর্ন রুপ নিয়ে বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে এখন ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসছে প্রচুর। সজিনা উৎপাদনের উপর চাষীদের কোন খরচ হয়না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজিনা ডাটা উৎপাদন হয় তার সবটুকুই চাষীর লাভ।

জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজিনার গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নাই তবে গত ৭ বছর আগে জেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে মুজিবনগর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিন উপজেলায় কয়েকটি গ্রামকে সজিনা গ্রাম নামে নামকরন করে ১০ হাজার সজিনা চারা বিতরণ করে। 

পরবর্তিতে সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলেও সেই গ্রামগুলিতে এখন সজিনা গ্রাছে ভরে গেছে। সেখান থেকে চাষীরা লাভবান হওয়ায় গত কয়েক বছর সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আরো ৫০ হাজার সজিনা গাছের ডাল ও চারা চাষীদের মাঝে বিতরণ করে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চাষীরা তাদের নিজের উদ্যোগে সজিনা গাছ লাগিয়েছে। সেই হিসেবে কৃষি বিভাগের ধারনা জেলায় জেলায় লক্ষাধিক সজিনা গাছ আছে। গড়ে প্রতিটি গাছে ২০ কেজি করে সজিনা ফলন পেলে ২ হাজার মেঃ টন সজিনার ডাটা উৎপাদন হবে বলে ধারনা কৃষি বিভাগের।

   
সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতি বাড়ীতে কমবেশি সজিনা গাছ আছে। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার যায়যায়দিনকে জানান, দেশে সজনে সচারাচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমী এবং বারমাসী। মেহেরপুরে আগে বারমাসী জাতের সজনে আবাদ কম হলেও এখন তা বাড়ছে। কেননা বারোমাসীতে উৎপাদন বেশি হয়। সাধারণত অন্যান্য ফসলাদির মত সজনে গাছের জন্য কোনো চাষাবাদ কিংবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। 

মূলত গ্রামাঞ্চলের লোকেরা নিজ বাড়ির পাশে বা অনুপযোগী ক্ষেতের আইল, অথবা রাস্তার দু’পাশে সজনে গাছের ডাল লাগিয়ে থাকেন। যেহেতু এখন সজিনা ডাটার গুণাগুণ সমন্ধে মানুষ জেনে গেছে। ফলে ডাটা খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের মাঝে সজিনা চারা বিতরন করে সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

যাযাদি/ এমএস