শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মজিবুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগারে বাড়ছে পাঠকের সংখ্যা : গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বই পৌছে দেবার উদ্যোগ

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১০
আপডেট  : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১২

বই পড়াকে আকৃষ্ট করে তুলতে নওগাঁর সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এক পল্লীতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টি নন্দনকারী ‘মজিবুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার’।

প্রতিদিন পাঠাগারে জ্ঞান অর্জন করতে আসছে নানা বয়সী মানুষ ও তরুন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে পাঠাগারটি এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। শিক্ষার্থীদের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নেয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ।

বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে মুক্তিযুদ্ধ, পরিবেশ ও শিশু কিশোরদের শিক্ষনীয় চলচিত্র ও ডকুমেন্টরী দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও মাসিক ১শত টাকা থেকে ৫’শত টাকা পর্যন্ত প্রদান করে ‘লাইব্রেরী বন্ধু’ নামে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তিনি, যাতে লাইব্রেরী কাজের সংগে বই প্রেমীগণ সংযুক্ত হতে পারেন। এছাড়াও অনলাইন কবিতা, গল্প লেখা ও বই রিভিউ প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়েছে এবং তরুন শিক্ষার্থীরা যারা লকডাউনে পাঠ্যজীবন লকডাউন করে রেখেছেন তাদেরকে আকৃত করতে ও পড়ার টেবিলে আনতে প্রতিটি গ্রামে গ্রামে এবং বাড়ীতে বাড়ীতে বই পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নের আগ্রাদ্বিগুন বাজারে পাঠাগারটি অবস্থিত। সীমান্তবর্তী এলাকার আগামী প্রজন্মকে মাদক থেকে বাঁচাতে এবং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে নিজ উদ্যোগে পাঠাগারটি তৈরি করেছেন আলোকিত মানুষ সৃষ্টি স্বপ্নদ্রস্টা আলমগীর কবির। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে এবং মানবিক মানুষ গড়ার লক্ষে তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

আমেরিকান একটি গবেষণা একটি প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত রয়েছেন এবং মজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশবিদ হিসেবে সারা দেশে ব্যাপক সুনাম অর্জনকারী সংগঠন গ্রীণ ভয়েস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগারটিতে টেবিল, সেলফ ও আলমিরাতে থরে থরে সাজানো রয়েছে হাজারও বই। পাঠাগারটিতে শোভা পাচ্ছে ইতিহাস, প্রবদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গল্প, মুক্তিযুদ্ধ, ছোট গল্প, ইসলাম, জীবনি, খেলাধুলা, শিশুতোষ, ঐতিহ্যসহ প্রায় চার হাজারের মত বই রয়েছে। আরো আছে মাল্টিমিয়িা ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবির বলেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক সভ্যতার এই কালে সবাই কেমন বই পড়া থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি জ্ঞান ভিত্তীক বা সমাজ ব্যবস্থা একজন মানুষকে মানবিক হিসেবে মানুষ তৈরী করার ক্ষেত্রে পাঠাগারের বিকল্প নাই। আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের পাঠ্য বইয়ের বাহিরে খুব কমই জ্ঞান রাখে। ফলে যদি জ্ঞান ভিত্তীক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হয় একজন ভাল মানুষ বা মানবিক মানুষ তৈরি করতে চাই তাহলে তাকে শিল্প সাহিত্য ও পড়াশুনা করতে হবে। তাই পড়ার কোন বিকল্প নাই। মানুষ যদি বই পড়ে তার মধ্যে বোধ এবং চেতনা জন্ম গ্রহণ করবে। তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে। জ্ঞান চর্চার অভাবে আমাদের সমাজে প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষের বড়ই অভাব, আমার এই চিন্তাধারা থেকেই নিজ এলাকার ছেলে মেয়েদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছি।

স্থানীয় আগ্রাদ্বিগুন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেনজির আহমেদ বলেন, এটি অনেক মহৎ একটি উদ্যোগ। একটি পাঠাগারের যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার সবগুলোই সেখানে বিদ্যমান। পাঠাগারটি সময় উপযোগী সময়ে তৈরি করা হয়েছে। আমি নিজেও অবসর সময়ে পাঠগারে গিয়ে বই পড়ি। আমার শিক্ষার্থীদেরও পাঠাগারে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি এবং তারা নিয়মিত সেখানে বই পড়েন।’

ধামইরহাট উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) গণপতি রায় বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি পাঠাগার সত্যিই প্রসংশার দাবি রাখে। এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পাঠাগারটি স্থাপন করায় আলমগীর কবিরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি পাঠাগারে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ আসবে বই পড়বে। মাদক, সন্ত্রাস ও বাল্যবিবাহ থেকে দূরে থাকবে। আগামীতে যদি পাঠাগার বিষয়ে কোন ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে তা অবশ্যই করা হবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে