শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে বইমেলা নিয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরুর প্রস্তাব বাংলা একাডেমির প্রকাশকরা ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলার পক্ষে
আব্দুল্লাহ রায়হান
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৫৯

প্রকাশকদের চাপের মুখে অমর একুশে বইমেলা ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্ত সাপেক্ষে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। প্রকাশকদের দুই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি মেলা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সবাই এখন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে এখনো কিছুই জানেন না। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে সিদ্ধান্ত দিতেও অপারগতা জানিয়েছে। এদিকে প্রকাশকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইমেলা ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বলে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

ফেসবুকে প্রকাশকদের বইমেলা শুরু বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট দেখে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ডক্টর জালাল আহমেদ যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির বইমেলা আয়োজক কমিটির এক সভায় বইমেলা শুরুর জন্য একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি এবং অন্যপ্রকাশের সিইও মাজহারুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে তার ফেসবুক প্রোফাইলে মেলা নিয়ে স্ট্যাটাসে একই তথ্য জানিয়েছেন। স্ট্যাটাসে মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন, 'এ বছর অমর একুশে বইমেলা ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা একাডেমির সঙ্গে দুই প্রকাশক সমিতির নেতাদের সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।' আগের দিন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে মেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেব্রম্নয়ারিতে মেলা শুরু না হলে মার্চে প্রকাশকরা মেলা করবেন না।

২০২১ সালে মার্চে গরমের সময় মেলায় মানুষের প্রবেশ কম ছিল। বই বিক্রি করতে না পারায় এতে অনেক প্রকাশকই ব্যবসা করতে পারেননি। এ কারণে এবার অনেকেই পুঁজি সংকটে পড়েছেন। অনেকেই ব্যাংক লোন, বন্ধু/পারিবারিক লোন নিয়ে নতুন বিনিয়োগ করেছেন। তাই ফেব্রম্নয়ারিতেই মেলা চাইছেন প্রকাশকদের দুই সংগঠনের নেতারা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান বলেন, 'মেলা নিয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। মন্ত্রী অসুস্থ। কোভিড পরামর্শক টিম এখনো মেলা পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে। এ অবস্থায় ১৫ ফেব্রম্নয়ারি মেলা শুরু হবে কি না বলা যাচ্ছে না।' বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, 'বৈঠকে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ১৭ মার্চ বইমেলা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবটা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবে বাংলা একাডেমি। তারপর সেটা অনুমোদিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ঘোষণা করবেন কবে থেকে বইমেলা হবে।' তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত মেলা দুই দফা পিছিয়েছে। আর পেছানো ঠিক হবে না। আমরা চাইছি ফেব্রম্নয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হোক লেখক-পাঠক, প্রকাশকের প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রম্নয়ারিতে যদি বইমেলা না হয়, তবে তো তার তাৎপর্য থাকে না। বইমেলা এই ফেব্রম্নয়ারিতেই হবে।'

এদিকে, ১৭ জানুয়ারি লেখা এক চিঠিতে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে মেলা শুরু করতে প্রকাশকদের নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, 'বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান/স্টলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বত্বাধিকারী, প্রকাশক, বিক্রেতা ও কর্মীদের নামের তালিকা এবং তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্যাদি জরুরি ভিত্তিতে বাংলা একাডেমিতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।' বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলেন, 'বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা হওয়া প্রয়োজন। লেখক, প্রকাশক, বইপ্রেমী সবার দাবি এটা। আমরা তাই প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রণালয়ে ১৫ ফেব্রম্নয়ারি থেকে মেলা করার অনুমতি চেয়েছি। আশা করছি কোভিড পরিস্থিতিও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কমে আসবে এবং এ সময়ে মেলা করার অনুমতি মিলবে।' তিনি বলেন, 'টিকা ছাড়া শুরু করা যাচ্ছে না এবারের বইমেলা। প্রকাশকদের কাছে ইতোমধ্যেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন নেওয়ার যাবতীয় নির্দেশনা।

সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনেই এবারের বইমেলা ফেব্রম্নয়ারিতেই শুরু হবে বলে আশা একাডেমির মহাপরিচালকের। তিনি বলেন, 'এবার বইমেলায় আসতে অবশ্যই সবাইকে টিকার সনদ দেখাতে হবে। বইমেলায় যারা স্টল নিচ্ছেন প্রকাশক, বই বিক্রেতাসহ সবাইকে করোনাভাইরাসের টিকার সনদ দেখাতে হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক একাডেমি প্রাঙ্গণে ভ্যাকসিন প্রদান বুথ স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।' সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বাংলা একাডেমির প্রস্তাবনার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। বইমেলা নিয়ে মন্ত্রণালয় এখনো কোনোরকম নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। জাতীয় কোভিড-১৯ পরামর্শক টিমের সিদ্ধান্তের বাইরে মেলা করার সুযোগ নেই।' মেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বাংলা একাডেমিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে প্রকাশক, বিক্রেতাসহ সবাইকে টিকা দিয়ে রাখতে। মেলা যখন থেকেই হবে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে মেলায় প্রবেশ করতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে